মোঃ মহিউদ্দীন খাঁন।কমলগনঞ্জ(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধিঃ
‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ’ বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বিশ্বনন্দিত সাংস্কৃতিক ধারক মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম উৎসব মহারাসলীলা আগামী শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) অনুষ্টিত হবে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ ও আদমপুরের দুটি মন্ডপে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছেন আয়োজকরা।
রাসোৎসব উপলক্ষে কমলগঞ্জের মণিপুরী অধ্যূষিত এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। রাতভর রাধাকৃষ্ণের প্রণয়োপখ্যানের সে রাসলীলা উপভোগ করতে সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষজন।সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রেখেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন আয়োজকরা।
আয়োজন সফল করতে কমলগঞ্জের মণিপুরী পাড়ায় চলছে চুড়ান্ত মহড়া ও আনুসাঙ্গিক প্রস্তুতি। এ উপলক্ষে মণিপুরী সম্প্রপ্রদায়ের মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। মণিপুরী স¤প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। রাসোৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামবে বলে আয়োজকরা জানান।
এ রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জের মণিপুরী অধ্যুষিত গ্রামগুলোর ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ চলছে। পাড়ায় পাড়ায় প্রায় এক মাস ধরে চলছে রাসনৃত্য ও রাখালনৃত্যের মহড়ার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। কমলগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী মহারাসলীলাকে কেন্দ্র করে গোটা কমলগঞ্জ উপজেলা উৎসবে পরিণত হয়। বিভিন্ন শ্রেণি ও জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন এ উৎসবে। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় দিনরাত অপ‚র্ব এক মিলনমেলায় পরিণত হয় মণিপুরী জনপদ।
এ বছর কমলগঞ্জের মাধবপুর শিববাজার জোড়ামন্ডপ প্রাঙ্গণে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ১৭৯তম রাসোৎসব পালন করবে। অন্যদিকে ১৯৮৬ সাল থেকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মীতৈ সম্প্রপ্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। আদমপুরে পাশাপাশি দুটি স্থানে হবে রাস উৎসব। আদমপুর জোড়া মণ্ডপ ও মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মীতৈ সম্প্রদায় আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, স¤প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম। মণিপুরী নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুন নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ সিংহ জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। এখন পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ। নতুন কাপড়চোপড় কেনা হয়েছে। আমাদের কাছে হেমন্তকাল মানেই রাস-পূর্ণিমা, রাস উৎসব। মাধবপুর শিববাজার উন্মুক্ত মে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত রাখাল নৃত্য বা গোষ্ঠলীলা, সন্ধ্যায় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ১২টা থেকে শিববাজার ও জোড়ামন্ডপে শনিবার ঊষালগ্ন পর্যন্ত শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম, এ, মান্নান এমপি। প্রধান আলোচক থাকবেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি।
মাধবপুর ও আদমপুরে রাসমেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহারাসলীলাল মূল উপস্থাপনা শুরু হবে দুপুর থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালক বেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহুর্ত) পর্যন্ত চলবে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলাই কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান বলেন, আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় পুলিশের তিন স্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।