সাইফুল্লাহ নাসির,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার তালতলীতে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবৈধ বাণিজ্য। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে একটি ক্লিনিকের অনুমোদন (লাইসেন্স) থাকলেও তাও মেয়াদ উত্তীর্ণ। বাকি গুলোর একটিতেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই।
বরগুনার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়,তালতলী উপজেলায় নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, তালতলী ইসলামী হসপিটাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার,তালতলী ডিজিটাল ডায়াগনোস্টিক সেন্টার,দোয়েল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিউ-পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স থাকলেও চলতি বছরের জুন মাসে মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাকি তিনটিতে কোনো ধরেন লাইসেন্স নেই। কেবল লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেছেন।
সরকারি অনুমোদন পাওয়ার আগেই ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক গুলো চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে ।অনলাইনে আবেদন করা হলেও এখনো তারা লাইসেন্স পাননি । সরকারি বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স পাওয়ার একদিন আগেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। কিন্তু বছরের পর বছর বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান খুলে শুরু করেন অবৈধ বাণিজ্য। এদিকে নবায়ন না করেও নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলছে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই।
তালতলী উপজেলা পরিষদের সামনে মুক্তিযোদ্ধা ভবন ভাড়া নিয়ে তালতলী ইসলামী হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাযক্রম শুরু করেন। তবে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই ক্লিনিকটিতে রোগী ভর্তি এবং অস্ত্রোপাচার চালাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখানে নেই কোন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক।একই ভাবে দোয়েল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে গর্ভবর্তী রোগি ভর্তি করে অকারণে অস্ত্রোপাচার করতে বাধ্য করেন রোগির স্বজনদেরকে এমনই অভিযোগ রয়েছে দোয়েল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার বিরুদ্ধে। এদিকে নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সেবা নিতে যাওয়া রোগিদের কারণে অকারণে টেস্ট দিয়ে হয়রানি ও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তালতলী ডিজিটাল ডায়াগনোস্টিক সেন্টারেরও রয়েছে এমন অভিযোগ। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নামে প্রতিদিন অতিরিক্ত মাইকিং এ অতিষ্ঠি তালতলীবাসী।
এসব ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা শতাধিক ভুক্তভোগী রোগিদের সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তালতলীতে যে কয়টি ক্লিনিক রয়েছে তারা টেস্টের নামে আমাদের হয়রানি করে আসছে। এ ছাড়াও টেস্টে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। আমরা গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে আসি, আমাদের এমন ভাবে হয়রানি করলে কার কাছে বিচার দিবো ও সঠিক সেবা পাবো।
এবিষয়ে তালতলী ইসলামী হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মাসুম ফরাজী বলেন,আমাদের সকল কাগজপত্র স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর চালান ফরমও আমাদের কাছে আছে। অস্ত্রোপাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যায়।
নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিক মোঃ আবুল বাসার এর মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওছার হোসেন বলেন, লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে সেগুলোর বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের জানালে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যম ব্যবস্হা গ্রহন করবো।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. আবদুল মুনয়েম সাদ বলেন, সরেজমিনে ভিজিট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন,ক্লিনিকাল লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্রোপাচার ও মেজর কোনো সার্জারি করার সুযোগ নেই।
বরগুনা জেলার সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মারিয়া হাসান বলেন, তালতলীতে কয়টি ক্লিনিকের আবেদন আছে সে গুলো ভিজিট করার কথা রয়েছে। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতাকে লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক ও সেন্টারের তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তালিকা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।