এস এম খলিলুর রহমান,
যশোর ব্যুরো চীফঃ
৫ জুলাই ২০২১ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি অনুযায়ী কঠোর বিধি-নিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গত ১ মাস ধরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ২য় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেন। কিন্তু বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ না কমায় সরকার করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধি নিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়িয়েছে।
এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধি নিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৪ জুলাই দিবাগত রাত ১২ টা পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের সময়সীমা বর্ধিত করা হলো।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সরকার গত ১ জুলাই থেকে ৭ দিনের কঠোর বিধি-নিষেধ প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে উল্লেখ করে দেয়া হয় ২১টি নির্দেশনা। কঠোর বিধি-নিষেধের ৫ দিন পার হতে চললেও এর মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কিন্ত সেই কঠোর বিধি-নিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী বুধবার ৭ জুলাই মধ্যরাতে। এর মধ্যে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোও ১ সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই প্রেক্ষাপটে বিধি-নিষেধের মেয়াদ আরোও ১ সপ্তাহ বাড়ানো হলো।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ রবিবার ৪ জুলাই তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোগের কেড়ে নিয়েছে আরোও ১৫৩ জনের প্রাণ, যা ১ দিনে সর্বোচ্চ। এ সময়ে নতুন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ (হাজার) ৬৬১ জন।
বিধি-নিষেধে জরুরি সেবা দেয়া দফতর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসররকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। খোলা রয়েছে শিল্প-কারথানা। জনসমাবেশ হয় এমন কোন অনুষ্ঠানের আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। বিধি-নিষেধ ভেঙে বাইরে বের হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
বিধি-নিষেধের বর্ধিত সময়েও মানতে হবে যেসব নির্দেশনা-
১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান-ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. আইন শৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি, খাদ্যশস্য ও খাদ্য দ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
১০. বন্দর সমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিস সমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্য-বিধি অনুসরণ পূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোন ভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।
১৭. স্বাস্থ্য-বিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।
১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় ভাবে বিশেষ কোন কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের।