মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বাবু রাজশাহীঃ
বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি ১৮ নং ওয়ার্ড দলনেতা মোহন আলী। থাকেন রাজশাহীর শাহমুখদুম থানার মোড় এলাকায়। ২০১৬ সালে আনসার ভিডিপি সদস্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তিনি।
মোহন আলী জানান, সার্বজনীন রক্তদান সংস্থার উদ্দেশ্য একটাই, বিপদের সময় রক্ত সেবাদানকারির সংস্থার মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচানো । অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এটি করেননি।
মোহন আলী ছোটবেলা থেকেই নিয়োজিত রেখেছেন পরের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য। আনসার ভিডিপির সদস্য হওয়ার আগ থেকেই তিনি রক্তের যোগানদাতা হিসেবে রাজশাহীতে পরিচিতি পান। সেই চিন্তা থেকেই গড়ে তোলেন সার্বজনীন স্বেচ্ছায় রক্তদান সংস্থা।
এখন পর্যন্ত সেই সংস্থার মাধ্যমে ৪৬০০ এর বেশি মানুষকে রক্ত দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন। বিপদের মুহূর্তে মোহন আলীর কাছে ফোন আসলে তিনি তার সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে রক্ত জোগাড় করছেন এখনো। নীরবে আলো ফোটাচ্ছেন অন্যের ঘরে। বিনিময়ে শুধু চেয়েছেন অপরের মুখের হাসি।
এছাড়াও শাহমুখদুম সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে আরেকটি কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি ।
মোহন বলেন,১৭ই মার্চ ২০১৩ সালে এটি চালু করা হয়। এটি চালু করার উদ্দেশ্য ছিলো যারা লিখতে পড়তে জানেনা, সমাজে বিভিন্ন ভাবে অন্যায়ের শিকার হয় তাদেরকে সচেতন করে তোলা। তারপর সেখানে প্রথম দফায় ৩২ জনকে লেখাপড়া শেখানোর যাবতীয় উপকরণসহ এককভাবে শিক্ষা দেয়া হয়।
যখন তারা তাদের স্বাক্ষরসহ সবকিছু লিখতে ও পড়তে পারতেন তখন তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হতো। এভাবে পরবর্তী বারে ২৬ জনকে ভর্তি করা হয় বিনা টাকায়। শুধুমাত্র বয়স্ক ব্যক্তিরা যেনো কোনভাবে সমাজের বোঝা না হয়ে থাকে সে চিন্তা থেকেই মূলত আমি কাজ করেছি। যাদের মধ্যে ২৪ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ৮ জন মুসলিম ছিলেন।
মোহন বলেন,আমি ও আমার পরিচিত যারা রয়েছেন তাদেরকে নিয়ে আমরা কাজ করছি,সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের জন্য। কেউ ভালো বলবে এই চিন্তা থেকে নয়।
শাহমুখদুম এলাকায় কয়েকজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মোহন আলী নিজেও জুন মাসের শেষের দিকে করোনার সবগুলো উপসর্গ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হন। এক পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের হট লাইনে ফোন দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেন। সেসময়ে চরম অসুস্থ থাকা অবস্থাতেও কয়েক জনের রক্তের যোগানদাতা হন।
গতবছর চোখের সমস্যায় যারা আক্রান্ত তাদের জন্য বিনামূল্যে বারিন্দ মেডিকেল কলেজের অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করানো হয় তাদের সংস্থার মাধ্যমে। প্রায় একহাজার মানুষের চোখের ফ্রি চিকিৎসা করানো হয়েছে যার ডোনার ছিলো ঢাকার লায়ন্স ক্লাব এবং সার্বিক সহযোগিতায় বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
মোহন জানান, দুই বারে প্রায় ২২০০ মানুষকে কীটের মাধ্যমে ডায়বেটিকস আছে কি-না সেটিরও ব্যবস্থা করেছেন। গতবছর ১৩০০ জনের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয় তাদের সংস্থার মাধ্যমে। করোনাকালীন সময়ে তারা প্রায় ২০ জনের মতো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দাফন করেছেন।
কিছুদিন আগে বিএনসিসি ক্যাডেট কোর রাজশাহীর মহাপরিচালক তাদের সংস্থার মাধ্যমে ৩৫০ গরীব মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন।
করোনা চলাকালীন সময়ে ৪৫০ জন লোকের মাঝে স্যানিটাইজার,মাস্ক বিতরণ করেছেন তিনি ও তার দলের সদস্যরা।