এস,এম আঃ রাজনঃ
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আজ থেকে ৭২ বছর আগে পুরান ঢাকার কে.এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগ এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন জায়গায় দল পরিচালিত হলেও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোনো স্থায়ী কার্যালয় নেই।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার ৭০বছর ধরে ভাড়া অফিসে চলেছে দলীয় কার্যক্রম।তৎকালিন আওয়ামীলীগের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের নিজস্ব চেম্বার ভাড়া অফিসে ঝিনাইদহ মহাকুমা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে।
১৯৭১সালের স্বাধীনতার পর থেকে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। ১৯৭৪ সালে প্রাক্তন টেনিসক্লাব বর্তমান ঝিনাইদহ ক্লাবের মালিকানাধিন ভাড়া জায়গায় অ্যাডঃ আমির হোসেন মালিথার চেম্বারে মহাকুমা কার্যালয় নামে অস্থায়ী একটি কার্যালয় ছিল তখনকার মহাকুমা আওয়ামী লীগের। পরপর্তীতে ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগের কার্যালয় আবারও পরিবর্তন হয়ে ডাঃ আজিজুর রহমানের চেম্বারর এইচ.এস.এস রোডের ঠিকানায়।১৯৭৮সালে প্রিয়া সিনেমা হলে আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।কাউন্সিলে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালিন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কনভেনার জোহুরা তাজউদ্দিন।সেই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবিএম গোলাম মজিদ।কাউন্সিলে জেকেএমএ আজিজ সভাপতি ও মতিয়ার রহমান সাধারন সম্পাদক,বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দূল হাই এমপি যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে জেলা কার্যালয়ে উন্নিত হবার পর জেকেএমএ আজিজ সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার হলে ১৯৭৮ সালে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আয়ুব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের সময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির চেম্বারে দলীয় কার্যালয় নেন।
সর্বশেষ শেখ হাসিনার অনুদানে ১৯৯৬ সালে আয়ুব হোসেন ও মতিয়ার রহমান দীর্ঘ আঠার বছর দলের সভাপতি,সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ের ঠিকানা হয় শহরের প্রাণকেন্দ্র এইচ.এস.এস সড়কের অ্যাডঃ তোফাজ্জেল হোসেন এর মালিকানাধিন বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘ বছর ধরে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড পরিচালিত হত, অস্থায়ী কার্যালয়ে ২০১৮সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত । তবে বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা আ’লীগের এ দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সভা, জেলা , সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ব্যক্তিগত অফিসে হয়ে থাকে।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের অস্থায়ী কার্যালয় ভাঙার ৩০মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো নির্দিষ্ট অফিস এবং স্থায়ী দলীয কার্যালয় স্থাপন করতে পারেনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগ। এমনকি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর জন্য জেলা শহরের কোথাও অস্থায়ী কার্যালয়েরও ব্যবস্থা করতে পারেনি বর্তমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা দলটির গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এইচ.এস.এস সড়কের ভাড়া করা অস্থায়ী কার্যালয় থেকে উচ্ছেদের পর দলটির জেলা ইউনিটের কার্যক্রম দলটির নেতাদের নিজস্ব অফিস এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত হয়। ফলে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
দলীয় সূত্র বলছে, বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর জন্য কোনো অস্থায়ী কার্যালয় নেই। দলের নেতা-কর্মীদের কোনো সভা সমাবেশ হলে পুরাতন অফিসের সামনে এইচ.এস.এস সড়কে সম্পন্ন করা হয়। জেলার প্রভাবশালি শীর্ষ নেতারা নিজের অনুগত নেতা-কর্মিদেরকে নিয়ে জেলা শিল্প কলা একাডেমি,পৌর সভা,খোকা মিয়ার তেল পাম্প,সদর এমপির বাসভবন,জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিস,জীবন কুমার বিশ্বাসের বাসভবন,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবন,সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনসহ জেলার শীর্ষ নেতাদের নিজস্ব বাসায় দলীয় কার্যালয় সৃষ্টি করেছে অনুগতদের নিয়ে।জেলা ছাত্রলীগ,জেলা যুবলীগ,জেলা শ্রমিকলীগ,জেলা কৃষকলীগ,জেলা মহিলালীগ,জেলা যুব মহিলা লীগ,জেলা মৎস জীবিলীগ,মহিলা শ্রমিকলীগ ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ শহরের আলাদা আলাদা জায়গায় অনুগতদের নিয়ে বিকাল থেকে অবস্থান করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামীলীগের কয়েক নেতা বলেন, কার্যালয় না থাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে এক হয়ে কোনো দলীয় কার্যক্রম একসাথে পরিচালিত করতে পারছি না আমরা। এখন পযর্ন্ত স্থায়ী কার্যালয়ের বিষয়ে জেলা নেতাদেরও কোনো উদ্যোগ দেখছি না। কার্যালয় বিহীন জেলা আওয়ামীলীগ এ অবস্থার জন্য দলটির শীর্ষ নেতাদেরকে দায়ী করেন।
ত্রিশমাসের অধিক সময় জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় না থাকায় দলের পরিক্ষিত ত্যাগী,সাধারণ কর্মী-কমর্থকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তারা বলেন, নেতারা নিজস্ব অফিসে এবং ঘরে বসে দলীয় কাজ করেন-এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মনে রক্তক্ষরণ হয়। ‘আওয়ামীলীগ তো কারও ঘরে বন্দি দল না, তাই দলটির একটি স্থায়ী কার্যালয় অবশ্যই দরকার। এজন্য কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা,’ বলেন নেতা-কর্মিরা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌরমেয়র আলহাজ্ব সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, গত ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আব্দুল হাই সভাপতি ও আমি সাইদুল করিম মিন্টু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবার পর থেকে তৃনমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালি করেছি।আমি দায়িত্ব পাবার পর গত ৬বছরে জেলা আওয়ামীলীগের কর্মকান্ড প্রোগ্রাম করেছি তা নজির বিহীন। ‘বর্তমানে অস্থায়ীভাবে প্রায় দুই বছর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম চলছে। তবে স্থায়ীভাবে কার্যালয় নেয়ার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।২০১৮সাল পযর্ন্ত ভাড়া করা কার্যালয়ে দলীয় কার্যক্রম চলছিল। রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের জন্য শহরে কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। এজন্য গত ২বছরের মধ্যে কার্যালয় করা সম্ভব হয়নি । ‘জায়গা না পাওয়ায় স্থায়ী কার্যালয় হচ্ছে না।