মকবুল তালুকদারঃ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভ্রান্ত দ্বি-জাতি তত্ত্বের মিথ্যা দর্শনের ভিত্তিতে অদ্ভুত মানচিএের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাঙালি জাতির উপর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতন ও দুঃশাসনে নিষ্পেষিত বাংলার জনগণের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ প্রাঙ্গণে বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাংগঠনিক তৎপড়তায় জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারি মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করতে ১৯৫৫ সালে জাতীয় কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিমার্জন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলই নয়; স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা।
আওয়ামী লীগের সংগ্রামী ইতিহাস এ মুক্তি যুদ্ধ:
১৭ মার্চ’ ১৯২০ সালে জাতির পিতার জন্ম এবং ২৩ জুন ১৯৪৯ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা একটি অন্যটির সম্পুরক। মোট কথায় বংগবন্ধুর জন্ম না হলে ছাএ লীগ বা আওয়ামী লীগের মতো বিশাল সংগঠনের জন্ম হতো না, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মী বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টা ও অকুন্ঠ সমর্থনেই টংগী পাড়ার শেখ লুৎফর রহমানের প্রিয় খোকা জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়েছেন। তাই ইতিহাসবিদগন বলে থাকেন, বংগবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের জন্ম না হলে ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করা যেতো না; ১৯৫৪ সালে বংগবন্ধুর সফল সাংগঠনিক তৎপড়তায় সাধারন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠিকে দাঁত ভাঙা জবাব দেয়া যেতো না; ১৯৬২’র আমলাতান্ত্রিক শিক্ষা কমিশন বাতিল করা যেতো না; ১৯৬৬ সালে পুর্ব বাংলার স্বাধীনতার রুপরেখা পেশ করার মতো কোন নেতা খুঁজে পাওয়া যেতো না; ১৯৬৯ সালে স্বাধীনতার প্রথম বিজয় গন-অভ্যুথানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ছাড়া বংগবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করা যেতো না; বংগবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে সাধারন নির্বাচনে জয়ী হয়ে পাকিস্হানী স্বৈর-শাসকদেরকে জানান দেওয়া হয় যে বংগবন্ধুই বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ বাংলার সাড়ে শাত কোটি গন মানুষের রাজনৈতিক দল।কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর পাকিস্হানী হায়েনারা ক্ষমতা হস্তান্তরে তাল বাহানা শুরু করলে ৭ মার্চ’১৯৭১ বংগবন্ধু ঘোষনা করলেন; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম; এ বারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবং একই সাথে তিনি নির্দেশে দিলেন “তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবা; মনে রাখবা; রক্ত যখন দিয়েছি; রক্ত আরো দিবো এবং বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনসাল্লাহ। অতপর ২৫ মার্চ’১৯৭১ এর কালো রাতে পাকিস্হানী হায়েনারা স্বাধীনতাকামী বাঙালী নিধনে হত্যাযজ্ঞ চালালে বংগবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দেন এবং বংগবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে শুরু মুক্তি যুদ্ধ এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এিশ লক্ষ বীর বাঙালীর তাজা রক্ত এবং আড়াই লক্ষ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
১০ জানুয়ারী’১৯৭২ জাতির পিতা বংগবন্ধু পাকিস্হানী কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলায় ফিরেই দেশ প্রেমিক জনগনকে সংগে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রুপান্তর করার মানষে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু ৭১’এর পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট পিতা বংগবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা ও জেল খানায় জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করে সুদীর্ঘ ২১ বছর খুনী জিয়া, স্বৈরাচার এরশাদ এবং বাংলার ঘষেটি বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে পুনরায় বাংলাদেশকে পাকিস্হানী ধ্যান ধারনায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে উল্টো পথে পরিচালিত করে।
এমনতর অবস্হায় মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমতে বংগবন্ধু কন্যা জননেএী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসীন হয়েই নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে পুনরায় স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে উন্নিত করেন।কিন্তু অতীব দু:খজনক হলেও সত্য যে ইদানিং ৭১’এর পরাজিত শক্তি জামাত-শিবির বিএনপি এবং আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ‘কাউয়া’ প্রজাতির চরিএহীন সুযোগ সন্ধানীরা পুনরায় ১৫ আগষ্ট সৃষ্টির হীন উদ্দ্যেশে বিভিন্ন ভাবে আওয়ামী লীগ ও জাতির জনকের কন্যা জননেএী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
বর্নিত অবস্হায় মুক্তি যুদ্ধের পক্ষ শক্তির সর্বশেষ ঠিকানা বংগবন্ধু কন্যা জননেএী শেখ হাসিনা ও তাঁর জনগনমুখি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদেরকে দাঁত ভাঙা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে এবং মুক্তি যুদ্ধের পক্ষ শক্তির ছাএ জনতাসহ আওয়ামী লীগের দেশ প্রেমিক নেতা কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে জননেএী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে দৃঢ প্রত্যয় গ্রহন করতে হবে।
জয় বাংলা জয় বংগবন্ধু।শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবি হউক।
লেখক:* যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষিবিদ।