মোঃ গোলাম মোস্তফা, নান্দাইল (ময়মনসিংহ):
ময়মনসিংহের নান্দাইলের কাটলিপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের ছোট ছেলে ফরিদ মিয়া (২৫) গরু ও কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বদলে ফেলেছেন নিজের ভাগ্যকে। দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম ও ঘনিষ্ট সাধনার প্রেক্ষিতেই সৌভাগ্যের দেখা মেলে। নিজ মেধা,কৌশল ও কর্মশক্তির ইচ্ছার ফলেই ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালে আলিম পাশ করে সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু চাকুরি করার স্বপ্ন তার পূরণ হয়নি। চাকুরির আশায় দিশেহারা হয়ে বেকার অবস্থায় নড়বড়ে চলছিল তার জীবন। ঠিক তখনি নান্দাইল উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের ক্রেডিট সুপারভাইজার বর্তমানে সহকারি যুব উন্নয়ন অফিসার রতন চন্দ্র দাসের সাথে দেখা মিলে তার।তার সহযোগীতায় ২০১৩ শেষের দিকে ৮২ তম ব্যাচে ময়মনসিংহ সদরের শিকারীকান্দা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সফলতার সহিত ত্রৈমাসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। হাসঁ-মুরগী পালন,মৎস্য চাষ ও গবাদি পশু-পাখির প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অর্জন করেন ফরিদ মিয়া। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ গ্রাম থেকেই গবাদি পশু-পাখির চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। নিজ উপজেলা সহ পার্শ্ববতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এই চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।তিনি ছোট্ট ঔষধের দোকান দেন। বছর খানেক পর দোকান থেকে উপার্জিত ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি দেশী গরু ক্রয় করে তা পালন শুরু করেন। বছর ঘুরে আসতেই সেটি বাচ্চা দেয়। গাভীটি বিক্রি করে আরও দুটি দেশী গরু ক্রয় করেন।
এই দুটি গাভী থেকে আজ তার ভাগ্যর চাকা বদলে গেছে। এখন তার খামারে বিভিন্ন জাতের ১৫টি গরু রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা ।খামারের নাম রেখেছেন “আল্লাহ ভরসা ক্যাটল ফার্ম”।গরুগুলো লালন-পালনের জন্য রয়েছে একজন কর্মচারী। সব মিলিয়ে পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে এখন তার সুখী পরিবার।
এছাড়াও তিনি গবাদী পশুর উন্নয়নে আরো একাধিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে ফরিদ মিয়া বলেন, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ৫০টি গরুর মালিক সহ বড় ধরনের গবাদী পশুর ফার্ম তৈরী করার জন্য শুধু ভবিষ্যত পরিকল্পনাই নয় বাস্তবায়নের পথে হাঁটছি। যাতে আরও ৪থেকে ৫জন লোকের কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।
তিনি বলেন, মেধা ও শ্রম কখনও বৃথা যেতে পারেনা। শুধু পরিকল্পনা ও সে অনুযায়ী বাস্তবায়নে অগ্রসর হওয়াই ভাগ্য বদলের মূল বিষয়। ফরিদ মিয়া জানান, তিনি শখ করে এক জোড়া কবুতর কিনেছিলেন। তার এক জোড়া কবুতর থেকে এখন ৫০ জোড়া কবুতর হয়েছে। প্রতি মাসে অনেক বাচ্চা দেয়। যাতে নিজের পরিবারের মাংসের চাহিদা মিটানোসহ প্রতিমাসে অনেক টাকা বিক্রি করতে পারছেন। তিনি বলেন,সকল বেকার যুবকই মেধা,সততা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য বদলাতে সক্ষম।
ফরিদ মিয়া বলেন,পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমি এখন সুখী। তিনি তৃপ্তির হাঁসি হেঁসে বলেন, আমার পরিবারের উপার্জনের কোন পথ ছিলনা। নিজের মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে আজ আমি স্বাবলম্বী। আমি মহান আল্লাহর
কাছে শোকরিয়া আদায় করছি।
এবিষয়ে নান্দাইল যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ বলেন,ফরিদ একজন সফল আত্নকর্মী ও উদ্যোক্তা। সে জাতীয় যুব পুরুষ্কারের জন্য আবেদন করলে আমরা যথাযথ সহযোগিতা করবো।