শাহাবুদ্দিন মোড়ল ঝিকরগাছা উপজেলা :
যশোরের ঝিকরগাছায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা মামলার পরও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বা আদালতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্যক্তি মালিকানা জমি সরকারি ভাবে দেওয়া হচ্ছে ইজারা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৩নং শিমুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামে। ২০১২ সালে বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতে ৯জনকে বিবাদী করে জমাজমি সংক্রাংন্ত একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন মৃত. আব্দুল আজিজের ছেলে সোহরাব হোসেন ও মেয়ে খাইরুন নাহার। দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ১৭/২০১২। উক্ত মামলায় বাংলাদেশ সরকারকে ৯নং বিবাদী করা হয়। তখন বিজ্ঞ আদালত বাদিদ্বয়ের সকল কাগজপত্র দেখে ১৫/০৪/২০১৩ তারিখে বাদিদ্বয়ের অনুকূলে ৭.৮০একর জমির প্রাথমিক ডিক্রীর আদেশ দেন যশোরের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতের যুগ্ম জেলা জজ। পরবর্তীতে ১০/১১/২০২০ তারিখে বাদির জমির প্রাথমিক ডিগ্রীরকে চুড়ান্ত ডিক্রী করেন বিজ্ঞ আদালত। জমির পক্ষে বাদিদ্বয়ের রায় থাকার পরেও বাদিদ্বয়ের জমির পাশে সরকারি জলমহল থাকার কারণে বাদিদ্বয়ের ৭.৮০একর জমি সহ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক মোঃ জাহিদুল ইসলাম ০৫/০৪/২০১৮ সালে সরকারি জমির সাথে বাদিদ্বয়ের ৭.৮০একর জমি সংযুক্ত করে মোট ১৮.২৫একর জমি দেখিয়ে স্থানীয় পত্রিকাতে একটি জলমহল ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। তখন বাদিদ্বয়ের পুকুরে থাকা মাছ ও আনুসাঙ্গীক বিষয়ের উপর অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। সেই সময় বাদিদ্বয়ের নিজের বাঁচার স্বার্থে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন সুরহা না পেয়ে আবারও বিজ্ঞ আদালতে যান। বিজ্ঞ আদালতে ৫জনকে বিবাদী করে জমাজমি সংক্রাংন্ত আর একটি দেওয়ানী নিষেধাজ্ঞা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিবাদী ৫জন হলেন, ১। যশোরের জেলা প্রশাসক, ২। যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ৩। ঝিকরগাছার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ৪। ঝিকরগাছার উপজেলা সহকারী (ভূমি) কমিশনার ও ৫। ঝিকরগাছার শিমুলিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশীলদার)। দেওয়ানী নিষেধাজ্ঞা মোকদ্দমা নং ৬৫/২০২১। বিজ্ঞ আদালত বাদিদ্বয়ের সকল কাগজপত্র দেখে মামলার ৫জন বিবাদীগণের নিকট নোটিশের মাধ্যমে বাদিদ্বয়ের নালিশী জমি সম্পর্কে জানতে চান। সরকার পক্ষের প্রতি কেন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দ্বারা বারিত করা হবে না, তন্মর্মে কারণ দর্শানোর জন্য একটি নোটিশ প্রদান করেন। আদালতের নোটিশটি সম্প্রতি ২৯/০৩/২০২১ তারিখে ৯১১-৯১২ স্মারকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর গ্রহণ করেছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। বিজ্ঞ আদালতের নোটিশ গ্রহণের পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আরাফাত রহমান ২২/০৩/২০২১ তারিখে ১৮.২৫একর জমি দেখিয়ে স্থানীয় পত্রিকাতে আবারও আর একটি জলমহল ইজারা বিজ্ঞপ্তি (১ম ও ২য়) প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর উপজেলা সহকারী (ভূমি) কমিশনার বা ৪নং বিবাদী কাজী নাজিব হাসান ১৩/০৪/২০২১ তারিখে ৩১.৪৪.৪১২৩.০০০.৯৯.০০১.২১-৪২২(৫) নং স্মারকে সরকারি জমির সাথে সংযুক্ত করে বাদিদ্বয়ের জমি ৩বছরের জন্য আবারও হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নিকট ইজারা প্রদান করেন। হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আসাদুজ্জামান ১৫/০৭/২০২১ তারিখ বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংক ঝিকরগাছা শাখার অনুকূলে ৩৭নং চালানে নগদ ৫০হাজার টাকা জমা প্রদান করে। তারপর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বাক্ষরিত আদেশ গ্রহণ করে ১৬/০৭/২০২১ তারিখ শুক্রবারের প্রথম প্রহর অনুমান রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাতের আধারে হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কর্তৃক আর একটি পক্ষ বাদিদ্বয়ের দখলকৃত জমির মধ্যে থাকা পুকুরে প্রায় ১০লাখ টাকার মাছ, পুকুরের পাড় ভাঙ্গা ও পাটা সরিয়ে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি সাধন করেছে। ৯বছর যাবৎ আদালতে মামলা করে বর্তমানে বাদিদ্বয়ের অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছে এবং তারই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির সুবিধাভোগীরা সুবিধা লুটছে এবং এই ইজারা দেওয়ার ফলে বাদিদ্বয়ের অনাহারে দিন কাটাতে হবে বলে ১নং বাদি সোহরাব হোসেন অভিযোগ তুলেছে।
উপজেলা সহকারী (ভূমি) কমিশনার কাজী নাজিব হাসান বলেন, সরকারি ভাবে এটা ইজারা চলছিলো। যদি এ বিষয়ে কোর্টের কোনো নির্দেশনা থাকে যে এটার কোন ইজারা দেওয় যাবে না তাহলে এটা বাতিল হয়ে যাবে। এটার বিষয়ে সাবেক ইউএনও আরাফাত স্যার বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এইটা শুধুমাত্র আমার কোন বিষয় না। জলমহল কমিটির সবাই মিলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারপরেও যদি কোন অর্ডার বা চিঠি থাকে ইজারা দেওয়া যাবে না তাহলে জলমহল কমিটির মিটিং করে ইজারা বাতিল করে দেওয়া যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ মাহবুবুল হক জানান, খাল শ্রেণির জমি ব্যক্তি মালিকাধীন থাকতে পারে না এইটা হচ্ছে আইন। প্রজাসত্ব আইন ১৯৫০ এ আছে। একজন ব্যক্তি এই শ্রেণির জমি তার নামে রের্কড করিয়েছে। এটা কখনোই সঠিক না। তবে এটা বিষয় নিয়ে তারা আদালতে যেতে পারে বা আদালতে গিয়েছে। তখন আদালত অবশ্যই চাইলে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। কিন্তু আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে আদালত একবার শোকজ দেয়। কেনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না এই জন্য কারণ দর্শানোর জন্য বলা হল। তবে এটা কিন্তু নিষেধাজ্ঞা নয়। কেনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না সেটার নির্দেশনা।