ঝালকাঠি প্রতিনিধি :
ঝালকাঠিতে ঈদের দিনে ফ্রি অক্সিজেন সেবা দেয়ার মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করল জেলার অন্যতম সাংবাদিক সংগঠন ” ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম “ এর আদলে গঠিত ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন’ ও নলছিটি উপজেলাধীন ” বেগম সামসুন্নাহার ফাউন্ডেশন “ এর সদস্যরা।
পবিত্র ঈদুল আযহা ( কোরবানী ) তথা ঈদের দিন ঝালকাঠি শহর এবং রাজাপুরে মোট ৫ জন রোগীকে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছে ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন’ সদস্যরা। এছাড়াও ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন’ সংগঠনের গক্ষ থেকে দুপুর ১২টায় জেলার ১০০ জনের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করে তাঁদের সংগঠন। প্রতিদিনের মত আজও রোগীর গক্ষ থেকে ফোন আসলে ঝালকাঠি শহর সহ রাজাপুর উপজেলায় ফ্রি অক্সিজেন সেবা পৌছে দিতে ছুটেযান অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে।
এ বিষয় ” ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম “ সভাপতি সাংবাদিক মনির হোসেনের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের আদলে গড়া ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন’ এর পক্ষ থেকে সভাপতি মনির হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আরিফুর রহমান রায়হানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, ” যখনই অক্সিজেন প্রয়োজন, পাশে আছে ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন “ এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাত দু’টো কিংবা ভোর পাঁচটা যখনই অক্সিজেন প্রয়োজনের সংবাদ পেলেই ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন’ এবং নলছিটি উপজেলার ‘বেগম সামসুন্নাহার ফাউন্ডেশন’ পক্ষ থেকে ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিতে ছুটে যান সংগঠন দুটির সদস্যরা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যখনই অক্সিজেনের জন্য ফোন আসে তখনই সংগঠনের সদস্যরা পিপি, মাস্ক ও গ্লাভস পরে অক্সিজেন সিলিন্ডার, পাইপ ও অক্সিমিটার নিয়ে এক একটি মটর সাইকেল দুজন করে ছুটে যান রোগীর ঠিকানায়। তেমনি এবারে ঈদের দিন ভোররাত থেকে ফ্রি অক্সিজেন সেবা দেয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের সদস্যদের ঈদ উদযাপন শুরু হয়। ঈদের দিনে ফ্রি অক্সিজেন সেবা মাধ্যমে এবারের ঈদ উদযাপন একটু ভিন্ন ধরনের হলেও আমরা সবাই আন্তরিক ভাবে খুশি।
এ ছাড়াও সাংবাদিক মনির হোসেন আরো জানান, ঝালকাঠিতে যখন দেখেছি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কসাইয়ের মতো ব্যবসা হচ্ছে, তখনই আমরা কয়েকজন সদস্য মিলে ভেবেছি যেকোনো উপায়ে অক্সিজেন সেবা বিনামূল্যে দিতে হবে। এ বিষয় সদস্যদের সম্মতি পাওয়া আমরা আমাদের সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে গত ৭ জুলাই থেকে এই সেবা চালু করি। আনুষঙ্গিক খরচ বাদেও তাঁর সংগঠন এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হজার টাকার অক্সিজেন সেবা করোনা রোগীদের দিয়েছে। প্রথমে ধার দেনা করে সে এবং রায়হান ৪৫ হাজার টকা খরচ করেন। পরে কয়েকজন কাছের মানুষের সহযোগিতায় বর্তমানে এই সেবা এগিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনে ১.৩৬ মিলিমিটারের ১১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মওজুদ আছে। রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেয়ার পাশাপাশি শহরের অন্তত ৭ টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে অক্সিজেন সাপোর্ট, অক্সিমিটার, স্যাভলন ও মাস্ক প্রদান করেছে ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন’।
শুধু তাই নয় ঝালকাঠি শহর থেকে সদর উপজেলাধীন কয়েকটি ইউনিয়ন একটু দূরে হওয়ায় সংগঠনের অপর এক সদস্য সাংবাদিক মো: ইমাম হোসেন বিমান তার উদ্যোগে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে অক্সিজেন সেবা পৌছে দিতে সদরের নবগ্রাম ইউনিয়নের নিজ গ্রামে বিনামূল্যে ফ্রি অক্সিজেন সেবা চালু করায় আমরা তাকে সব সময় সার্পোট দেয়ার মাধ্যমে সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছি। সবশেষে সাংবাদিক মনির বলেন, শেষ কথা হলো, যতক্ষণ সাধ্য ও সামর্থ্য আছে ততক্ষণ এই ফ্রি অক্সিজেন সেবায় কেউ এক কাপ চা’ও তাঁদের খাওয়াতে পারবে না।
এ বিষয় গ্রাম পর্যায় ফ্রি অক্সিজেন সেবা চালু করার উদ্যোক্তা সাংবাদিক মো: ইমাম হোসেন বিমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, গত বছর করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই আমি আমার নিজ উদ্যোগে আমার ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ সংক্রামন প্রতিরোধে কাজ করে আসছি। যখন দেখেছি ভারতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে শ্বাষ কষ্টে ভুগে অক্সিজেন সংকটে অনেকেই মৃত্যু বরন করছেন ঠিক তখন থেকেই আমার এলাকায় অক্সিজেন সরবারহ করার চিন্তা কিরেছি। তারই ধারাবাহিকতায় গতমাসে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আমার ব্যক্তিগত আইডি থেতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে পোষ্ট করি। আমার দেয়া পোষ্টে স্থানীয় ব্যবসায়ী, প্রবাসী সহ বিভিন্ন পেশার লোক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমি তাদের সহযোগীতায় প্রথমে একটি সিলিন্ডার দিয়ে কার্যক্রম শুরু করি এবং পরবর্তিতে আরেকটি সিন্ডর ক্রয় পূর্বক সংগ্রহ করি।
আমার এ বিষয়টি সামজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে পৌছায়নি বলে আমি মনে করি, গ্রামে করোনা রোগীর শ্বাষ কষ্টে যেন মৃত্যু বরন না করেন এবং দ্রুত ফ্রি অক্সিজেন সেবা পেতে পারেন এ জন্য নিজ উদ্যোগেই কিছু লিফলেট ছাপিয়ে গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজার, বিভিন্ন ঔষধ ফার্মেসি, মসজিদ মাদ্রাসা ভবনের দেয়ালে লিপলেটগুলো লাগিয়ে দেই। ফ্রি অক্সিজেন সেবা কাজের জন্য আমাকে ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম আদলে গঠিত ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন আমাকে সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছে।
এ বিষয় সংগঠনের আরেক সদস্য আব্দুর রহমান জানান, রোগীদের দ্রুত সেবা পৌছে দেয়ার জন্য আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলার অন্য সংগঠনকেও অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফ্রি অক্সিজেন সেবায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরন সমূহ দিয়ে আসছি। অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের ক্ষেত্রেও অন্যান্য সংগঠনকে মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন সহযোগিতা করছে। ‘ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম অক্সিজেন জোন’ এ ১১জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করলেও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান রায়হান যেনো অক্সিজেন সংকটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাই করেছেন।
মনির ভাইকে দেখেছি, করোনার এক রোগীকে গাড়ি থেকে কোলে করে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে পৌঁছে দিয়েছে। অন্য সংগঠনকে সাপোর্ট দেয়া ছাড়াও আমাদের সংগঠন সরাসরি ২৩ জন রোগীর বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছে। সংগঠন দু’টির প্রতিষ্ঠাতা যথাক্রমে মো. মনির হোসেন এবং মো. শাহাদাত ফকির। দু’জনেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলেও তাঁদের অর্জিত অর্থ দিয়েই শুরু করেছেন ফ্রি অক্সিজেন সেবা। তাঁদের এই কার্যক্রম দেখে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাদের খাঁন তাঁর বসার কক্ষটি ছেড়ে দিয়েছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার জন্য। এছাড়াও ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়নে অক্সিজেনের চাহিদা না থাকায় ‘আইডিয়াল ইয়ুথ সোসাইটি, শেখেরহাট’ নামে একটি সংগঠনও তাঁদের সিলিন্ডারটি আপাতত মনিরের সংগঠনে দিয়ে গেছে। প্রয়োজন হলে আবার নেবেন তাঁরা।