মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বাবু
রাজশাহীঃ
রাজশাহীতে আরএমপি পুলিশের পূর্ণাঙ্গ সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালু ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ওয়েবসাইট হ্যাকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করে টাকা উত্তোলন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারসহ সাইবার অপরাধ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার চাওয়া তো দূরের কথা অনেক সময় সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করাও মুশকিল হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নিজেই বুঝতে পারেন না তিনি অপরাধের শিকার হয়েছেন।
এ ধরনের সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। রাজশাহী মহানগরে যাতে কোনো ধরনের সাইবার ক্রাইম সংঘটিত না হয় এবং কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার লক্ষ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে পুলিশের স্বতন্ত্র এই ইউনিট কাজ শুরু করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর কার্যক্রমে সফলতার জন্য বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। গত ১০ মাসে এসেছে শতাধিক অভিযোগ।
যার প্রায় সবগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে। এমনকি রাজশাহীতে গত ছয় মাসে প্রতারণার মাধ্যমে পাচার হওয়া ১২২ নারীর মধ্যে ১১৪ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা, পাচার ও পর্নোগ্রাফির মতো অভিযোগগুলো প্রতিনিয়তই আসছে রাজশাহী জেলা ও নগর পুলিশের কাছে। তবে মানবপাচারের মতো ঘটনায় অভিযোগ জেলায় বেশি। অন্যদিকে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার সংখ্যা বেশি নগরে।
আরএমপি সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, রাজশাহী জেলা ও মহানগর মিলে পর্নোগ্রাফি ২৬টি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৩১টি। জেলা পুলিশের থানাগুলোতে নারী পাচার (মানবপাচার) ১১৭টি, পর্নোগ্রাফি দুইটি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে চারটি। মহানগরের থানাগুলোতে নারী পাচার (মানবপাচার) পাঁচটি, পর্নোগ্রাফি ২৪টি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ২৭টি।
রাজশাহী জেলা ও মহানগরে গেল ছয় মাসে (২০২১ সালে জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত) প্রতারণার মাধ্যমে ১২২ নারীকে পাচারের অভিযোগ এসেছে পুলিশের কাছে। এর মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ১১৪ জনকে।
অভিযোগ রয়েছে পাচার কাজে সংশ্লিষ্টরা টার্গেট করে প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় বিপুল অঙ্কের টাকা। কখনও কখনও সামাজিক মাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও কম নয়।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ইনচার্জ সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্লু’ বিহীন যে কোনো ঘটনায় অপরাধীকে শনাক্ত করে দেওয়াই আমাদের কাজ। আমরা অপরাধীকে শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট থানায় জানিয়ে দেই। পরে থানা সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বলেন, সাধারণত নিখোঁজ যারা হন, তাদের পরিবার ও স্বজনরা থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাইবার ক্রাইম ইউনিট পর্নোগ্রাফি, হ্যাকিংয়ের মতো সাইবার ক্রাইমে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে সফল।
এই ইউনিট গঠনের পর আরএমপির পাশাপাশি জেলা পুলিশও এর সুফল পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কমকর্তা।