রিপোর্ট : ইমাম বিমানঃ
করোনার ভয়াল ছোবলে দিন দিন দেশে আক্রন্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে আর সে ক্ষেত্রে ঝালকাঠি জেলাতেও তার প্রভাব কম নয়। এ সময় জেলায় মানবসেবায় নিয়োজিত মানবসেবী ব্যক্তি বা সংগঠনের সাথে তাল মিলিয়ে সমানে তালে এগিয়ে চলছে রক্ত কণিকা ফাউন্ডেশনের ( আর কে এফ ) অন্যতম নারী সদস্য ও ঝালকাঠি জেলা (ঝালকাঠি টিমের) সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন নাহার ঐশী। জেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে নারী হয়েও সদর উজেলার বিভিন্ন স্থানে করোনা আক্রান্ত হয়ে শ্বাষ কষ্টে ভুগছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন আক্রান্ত রোগীর বাড়ীতে। এভাবেই দিন বা রাত যখনই ফোন আসছে তখনই তার সদস্যদের সাথে নিয়ে সিলিন্ডার সহ প্রয়োজনীয় উপকরন সহ চলেযান রোগীদের বাড়ীতে।
গত ২৭জুলাই দুপুরে সদরের শিরযুক এলকা থেকে হাসপাতাল থেকে ফিরে আসা করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের শ্বাষ কষ্ট হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে অক্সিজেন নিয়ে সংগঠনের সদস্য রাকিবুল ইসলাম সাগর, নয়ন তালুকদার, হাসানকে সাথে করে ছুটে যান শিরযুগ এলাকা। যাতায়াত ব্যবস্থা নৌপথ হওয়ায় রোগীর স্বজনরা অসুস্থ বৃদ্ধাকে নৌকায় নিয়ে শিরযুগ বেইলীব্রীজের নিকট আসলে ঐশী ও তার সাথে থাকা বাকি সদস্যরা মিলে নৌকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার তুলে শোয়া অবস্থায় অসুস্থ শ্বাষ কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়া বৃদ্ধকে অক্সিজেন সেবা দেয়। শুধু তাই নয় নিজেদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ না থাকায় রাতের আধারে বৃষ্টিতে ভিজে জেলার অন্য মানবিক সংগঠনে গিয়ে রোগীর জন্য সিলিন্ডার চেয়ে এনেও রোগীকে সেবাও দিয়েছেন জেলার অন্যতম করোনা যোদ্ধা মানবসেবীকা ঐশী।
এ বিষয় মানবসেবিকা ঐশী জানান, করোনার শুরু থেকে রক্তকনিকা ঝালকাঠি টিমের পক্ষ থেকে সচেতনতা মূলক কার্য্যক্রমের মধ্যে মাস্ক বিতরনের মাধ্যমে জনগনকে মাস্ক পড়তে উদভূদ্ধ করন, হ্যান্ড স্যানেটাইজার বিতরনের মাধ্যমে এর ব্যবহার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা ও উপকারিতা জানতে সহায়তা করন, সাবন বিতরনের মাধ্যমে বারবার হাত ধোয়ার আহবান জানান হয়। এছাড়াও আমরা রক্ত কনিকার সদস্যরা গর্ভবতী মা সহ রক্তের প্রয়োজন এমন রোগীদেরকে রক্ত দেয়ার মাধ্যমে স্থানীয় যুব সমাজকে রক্ত দানে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে আসছি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের জরুরী এ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের অনেকটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
ঝালকাঠ নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করে বর্তমানে বরিশাল বিএম কলেজে ইংরেজী বিষয় অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রী মানবসেবীকা ঐশীর কাছে স্কোচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রায় ৮/৯ বছর আগের ঘটনা আমার এক খালাতো ভাই থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার রক্তের প্রয়োজন ছিলো আর তখন রক্ত সংগ্রহ করতে আমার খালার পরিবারের সবাইকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।একব্যাগ রক্তের জন্য অনেকের দাড়স্থ হতে হতো। সেই দৃশ্য আমার চোখে এখনো ভাসে। তখন থেকেই আমি নিজে নিজেই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হই বড় হলে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করবো।যেই কথা সেই কাজ যখন ১৮ বছর পূর্ন হলো রক্ত কনিকা থেকে আমার বন্ধুরা ডাকায় আমি তাদের ডাকে সারা দিয়ে রক্তের গ্রুফ নির্ণয় করালাম এবং জীবনের প্রথম ২০১৮ সালের ১৪ তারিখে ভালোবাসা দিবসে একজন থ্যালাসিমিয়া রোগীকে একব্যাগ লাল ভালোবাসা উপহার দিলাম। সেই থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমার যাত্রা শুরু।
আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত আমি ১০ জন রোগীকে স্বেচ্ছায় ১০ ব্যাগ রক্ত দান করেতে পেরেছি। আমার স্বেচ্ছাসেবী জীবনে আমার অনুপ্রেরনা হিসেবে যারা সব সময় কাজ করেছেন সেই সকল সহযোদ্ধাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম না বললেই নয় আবিয়ান ইসলাম যাকে আমরা বলি ডোনার মেশিন, এম আই মারুফ আমার খুব কাছের একজন বন্ধু, হাসান,নয়ন, মোস্তাফিজ ভাইয়া, নির্ঝর ভাইয়া,আলী হাসান ভাইয়া। রক্ত কণিকা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি লিটন সরকার,সহ সভাপতি জসীম বিশ্বাস এবং মহাপরিচালক জহিরুল ইসলাম এদের আমি আমার গুরু এবং আইডল বলে জানি তাদের কাজ দেখেই সাহস পাই। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী ও মা ঢাকার একটা কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন বর্তমানে তিনি গৃহিনী। প্রথমে বাবা-মা বিষয়টি অন্যভাবে নিলেও বর্তমানে তারা আমার এ কাজে সহযোগীতা করছেন। আমি আমার পিতা-মাতা সহ আমার পরিবারের সকল সদস্য এবং রক্ত কনিকা ফাউন্ডেশনের সাতে যুক্ত সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাম করছি একই সাথে সকলে নিকট দোয়া কামনা করছি।