

স্টাফ রিপোর্টার : মোঃ ইকবাল মোরশেদঃ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমন নিয়ন্ত্রণে স্বাস্হ্য বিভাগের সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী সারা দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ শনিবার (৭ আগষ্ট) গণটিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়ও এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
সকাল ৯ টায় থেকে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
এ সময় লাকসামে মোট ৭ হাজার ২০০ জনকে গণটিকা প্রদান করা হয়। এদিকে কেন্দ্রগুলোতে ছিলো গণটিকা গ্রহণইচ্ছু মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ভিড় সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবী এবং স্বাস্হ্য কর্মীদের চরম হিমশিম খেতে হয়েছে।
এখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্হ্য বিধিও উপেক্ষিত হয়েছে। আবার ভ্যাকসিন নিতে না পেরে গণটিকা গ্রহণইচ্ছু অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের (নবগঠিত লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নসহ) প্রতিটিতে ৬০০ জন করে ৫ হাজার ৪০০ জনকে এবং পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৬০০ জনকে মোট ১ হাজার ৮০০ জনকে সর্বমোট ৭ হাজার ২০০ জনকে এ গণটিকা প্রদান করা হবে।
উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে আরো জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ২৭টি এবং পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডের ৯টি মোট ৩৬টি বুথে গণটিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। গণটিকাদান কর্মসূচি কার্যক্রমে পঞ্চাশোর্ধ বয়স্ক, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রগুলোতে ২৫ বছর ও তদূর্ধ্বরা সকাল থেকেই ভিড় করছেন। করোনার ভ্যাকসিন নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে এসেও তাঁরা ভ্যাকসিন নিতে পারেনি।
উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গণটিকা গ্রহণইচ্ছুদের উপচেপড়া ভিড়। ভিড় সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবীদের হিমশিম খেতে হয়েছে। ফলে সেখানে বিশৃংখল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ফলে অনেকে ভ্যাকসিন নিতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
অপরদিকে গণটিকাদান কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত স্বাস্থ্য কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা জানায়, ভ্যাকসিনের স্বল্পতার কারণে নির্ধারিত সংখ্যক মানুষ আগেই ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন। ফলে ওই নিবন্ধনের বাইরে কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি।
একজন স্বাস্হ্য কর্মী জানায়, এখানে ৬০০ জনের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ এই কেন্দ্রে এসে ভিড় করেন। ফলে তাদের চরম হিমশিম খেতে হয়েছে।
এখানে লাকসাম উপজেলা গোবিন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম উদ্দিন শামীম জানায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমার পরিষদের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীগণ নিয়ে গণটিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় আন্তরিক ভাবে কাজ করছেন।
কিন্তু চাহিদার তুলনায় ভ্যাকসিন স্বল্পতার কারণে বিপাকে পড়তে হয়েছে পরবর্তীতে ভ্যকসিন আসতেছে আসলে বাকিদের দেয়া ইনশাআল্লাহ।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে চরম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একেক সময় একেক ধরণের সিদ্ধান্তের কারণে চরম বিপাকে পড়েন স্বাস্হ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন ওইসব চিকিৎসক এবং স্বাস্হ্য কর্মীরা।
এ ছাড়া, গণটিকা গ্রহণইচ্ছু মানুষও ভোগান্তিতে পড়েন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিগণ জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের গ্রামভিত্তিক গণটিকা গ্রহণইচ্ছুদের নির্ধারিত সংখ্যক তালিকা প্রণয়ন করেছেন। কিন্তু বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা বেশী হওয়ায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে তাঁদের সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্নে জর্জরিত এবং বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
এই ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম জানান, স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিনের গণটিকাদান কর্মসূচি যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা এবং ভ্যাকসিন প্রাপ্তি সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত; কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমন বেড়ে চলেছে। এখানে এই পর্যন্ত (৬ আগষ্ট) ১ হাজার ৯২৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সুস্থ্য হয়েছ মাত্র ৭৫৩ জন এবং মারা গেছেন ৩৫ জন।