সেলিম চৌধুরী স্টাফ রিপোর্টারঃ-
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের. প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশি বিশিষ্ট ব্যাসায়ি ও সমাজ সেবক নুরুল আক্কাস। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শোক বার্তায় বলেন,
জন্মশতবর্ষের এই বছরটি তাৎপর্যবহ এবং বর্তমান করোনা মহামারীর সময়টিও নানারকম চ্যালেঞ্জে নিপতিত। এর মধ্যে সবার জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ, জঙ্গিবাদ নির্মূল ও তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করা অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে গণ্য হচ্ছে সচেতন মানুষের কাছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (১৯২০-৭৫) আদর্শের প্রচারও বেড়েছে। কারণ, তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির স্বজন। এ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানি শাসকদের জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকা-ে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত সেই মহান ব্যক্তি স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও জীবন্ত। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বর্তমান তরুণ প্রজন্মের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলের প্রচেষ্টাকে সেই জীবন্ত মহাপুরুষের আদর্শের ধারাবাহিকতা হিসেবে গণ্য করা যায়।
বঙ্গবন্ধু সর্বতোভাবে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটাতে নিজের জীবন বিপন্ন করেছিলেন। ছাত্রজীবনের শুরু থেকে বাস্তব সমাজে কাজের অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেন। রাজনীতিতে জড়িত হয়েছিলেন দেশের মানুষের দুঃখ ঘুচানোর জন্য। কর্মী থেকে হয়েছেন জাতির পিতা। গণমানুষের প্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। কর্মনিষ্ঠ, ধৈর্য, সংগ্রামী চেতনা, আপসহীনতা আর অসীম সাহসিকতার জন্য যুগস্রষ্টা নেতা হয়েছিলেন তিনি। পূর্ব বাংলার ইতিহাস গড়েছেন তিনি। কারাগারে বছরের পর বছর বন্দি মুজিবের বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার প্রচেষ্টা ছিল অসামান্য।
পঁচাত্তরের দুঃসময়-পরবর্তী মানুষের ভালোবাসা প্রদর্শন তবুও থেমে থাকেনি। মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে তার নামে। সেই পাশবিক নৃশংসতায় প্রাণপুরুষ চিরআরাধ্য কর্ণধারকে সপরিবারে হারিয়েছি আমরা। শোষিত জনতার নেতা বঙ্গবন্ধু। বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করার পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের চেতনায় স্বাধীনতার মর্মবাণী পৌঁছে দেয়াই ছিল তার আজীবনের সংগ্রাম।
পারিবারিক জীবনে নির্বিকার সময় কাটিয়েছেন খুব অল্পকাল। বলা যায়, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। স্বৈরশাসকদের তাবেদারি করেননি, নিটোল সুখের জীবনও তার ছিল না। একইভাবে ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বাঙালি জাতির স্বাধিকার অর্জন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন শিল্পী-সাহিত্যিক, কবি-নাট্যকার ও সমাজের অন্যান্য সংবেদনশীল জনগোষ্ঠী। একুশকেন্দ্রিক কবিতা, গল্প, গান, নাটক যেমন এর দৃষ্টান্ত, তেমনি অন্যসব গণআন্দোলনের অভিঘাতে আলোড়িত শিল্পীদের রচনাও ছিল উল্লেখযোগ্য। ফলে বঙ্গবন্ধু শিল্পী-সাহিত্যিক ছাড়াও পর্যটক, ব্যাবসায়ি
সাংবাদিকসহ সবাইকে আকর্ষণ করবেন-এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘বঙ্গবন্ধু’ একটি প্রভাব বিস্তারি শব্দ। স্বাধীনতার আগে ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের এমন কোনো বিষয় নেই যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই বিরাজমান ছিলেন। তিনি মানুষের চৈতন্যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এবং মানুষ তার সম্পর্কে কিছু না কিছু বলে আত্মতৃপ্তি অর্জন করেছে। ভারতীয় সাহিত্যে মাহাত্মা গান্ধী যেমন মানুষের কাছে লেখার উৎস ও প্রেরণায় পরিণত হয়েছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু অনেক লেখককে কেবল নয়, দেশের শিল্প-সাহিত্যের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুতে উন্মোচিত হয়েছেন। তাকে কেন্দ্র করে কবির চেতনা-মননে অব্যক্ত বেদনার নির্ঝর নিঃসরণ হয়েছে। আবার বাংলা শিল্প-সাহিত্যে তার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আমাদের দুঃখ, বাংলাদেশের সাহিত্যে ‘বঙ্গবন্ধু যুগ’ নাম দিয়ে একটি সময়পর্ব এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। অথচ ভারতীয় সাহিত্যে ‘গান্ধী যুগ’ বলে একটি কালপর্ব নির্দিষ্ট হয়েছে। বিশেষত, ১৯২০ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সাহিত্যের দুই যুগের বেশি সময় ‘গান্ধী যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত। কেন এই চিহ্নিতকরণ? কারণ, এই মহামানবের জীবন ও কর্মের ব্যাপক প্রভাব। ভারতের এমন কোনো ভাষা-সাহিত্য-শিল্পকর্ম নেই যেখানে গান্ধীজী নেই। সে তুলনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যে অপ্রতুল হলেও স্বাধীনতার এই মহানায়কের জীবন ও কর্ম আমাদের কবি-সাহিত্যিকদের চেতনায় নাড়া দিয়েছে। বিশেষত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডে পটভূমি বিপুলসংখ্যক কবি-সাহিত্যিককে আন্দোলিত করেছে। সর্বশেষ সকলকে টিকা গ্রহণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং মুখে মাস্ক পরিধান করে সুস্থতা কামনা করেন সকলের।