আবুল আতা মামুনঃ
সাভারে মালিকানার লভ্যাংশ ও প্রতিহিংসার বষবর্তী হয়ে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে পরিকল্পিভাবে হত্যা করে তারই অংশীদাররা। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া তথ্য ভিত্তেতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন। সোমবার দুপুরে উপজেলার বেরন এলাকার সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গন থেকে মাটি খুড়ে নিহতের মরদেহের খন্ডিত পাঁচটি টুকরা উদ্ধার শেষে এ সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মোতালেব, রবিউল এবং তার ভাগিনা বাদশা মিয়া। এদের মধ্যে বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে এবং মোতালেবকে রাজধানীর আশকোনা থেকে রবিউলকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, হত্যাকান্ডের শিকার কলেজ অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। তিনি অনেক ভালো কোচিং করাতেন বলে রবিউলের সাথে মনোমালিন্য ছিলো। এরই জেরে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের জনপ্রিয়তায় ইর্ষাণিত হয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার লভ্যাংশ নিয়ে তাদের মধ্যে মতোবিরোধের কারনে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
গ্রেপ্তারকৃত গত ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার মোতালেব, রবিউল ও তার ভাগিনা বাদশা মিলে মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে হত্যা এবং লাশ গুমের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৩ জুলাই রাতে কোচিং শেষে মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে প্রতিষ্ঠানটির ১০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে যায়। সেখানে প্রথমমে হাতুরী দিয়ে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের মাথায় আঘাত করে বাদশ। পরে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মৃতদেহটি ৬ টুকরা করে তারা। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচটি টুকরো প্রতিষ্ঠানের সামনেই মাটি চাপা দিয়ে রাখে এবং তার খন্ডিত মস্তকটি একটি পলিথিনে পেঁচিয়ে রাজধানীর আশকোনা নর্দ্দা এলাকার একটি ডোবায় ফেলে দেয়। মস্তকটি উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলামান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হত্যান্ডের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সিড়ির নিচে লুকিয়ে রাখা দা, শাবল, কোদাল, সিমেন্ট, বালু, তাদের পরিহিত গেঞ্জি এবং জিন্সের প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা ছিলো মৃতদেহটি পুতে রাখার পর জায়গাটি প্লাষ্টার করে রাখবে এবং খন্ডিত মৃতদেহের অংশ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিবে। এরই অংশ হিসেবে নিহতের মস্তকটি রাজধানীর আশকোনা এলাকায় নিয়ে ফেলা হয়। মৃতদেহটি উদ্ধারের সময় থানা পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থেকে সহযোগীতা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মিন্টু চন্দ্র বর্মন নিখোঁজের ঘটনায় নিহতের ছোটভাই গত ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী দায়ের করেন। ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও বিষয়টির ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে নিখোঁজের ২৭ দিন পর সোমবার মধ্যরাতে প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার রবিউলকে সনাক্ত করি এবং রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডের পর থেকে সে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানায়, গত ১৩ জুলাই রাতে রবিউল ও তার ভাগিনা বাদশা মিলে কোচিং পরবর্তী সময়ে ১০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে বাদশা প্রথমে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের মাথায় হাতুরী দিয়ে আঘাত করে। পরে তাকে পৈচাশিকভাবে হত্যা করে ৬টি টুকরা করে। পরে রবিউলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোতালেবকে রাজধানীর আশকোনা এলাকা থেকে এবং বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।