

সৈকত জোয়ারদার বাবু:
অবশেষে
পুংখানুপুংখ ভাবে খোঁজে দেখলাম। আপন বলতে কেউ রইলো না।
পৃথিবীতে কেউ হারিয়ে যায় অর্থ সম্পদ আর নারীর মোহে।
শেষ দিবসে হারিয়ে যাবে “ইয়া নাফসি” ইয়া নাফসি” করতে করতে।
তবে কি?
একাল সেকালে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়?।
নাকি মানুষ মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে স্বর্গের শান্তি খোঁজে পৃথিবীতে কেউ?।
মানুষ!
তার চারণভূমি হিসেবে পৃথিবীটাই ব্যবহার করছে। বসবাস যোগ্য স্থান ভেবে।
তবে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের মানসিকতায়। বিচার বিবেচনায় কেউ কেউ সঠিক, আবার কেউ সঠিক জেনেও প্রয়োগে ব্যর্থ। ব্যবহার করছে।
শিশুকালে!
মায়ের কোলে ভাবনা থাকেনা। নিষ্পাপ থাকে, কোলে কোলে। ধর্মের বাণী নেই! নেই শাসনের আবদ্ধতা! নেই আদরের শেষ কথা। নাম তখন যা ইচ্ছে তাই হতে পারে। যত মধুময় হতে পারে সেই ডাঁক। এই তো দিনেদিনে বর্ষ পার! তাই তো যখন বেড়ে উঠার দিনগুলো।
কিশোর!
তার পদেপদে বাহানার শেষ নেই! নেই স্মৃতির আকার রেখা! হারিয়ে যায় নতুন শ্রেনীর সাঁধে। নতুন শিক্ষক! নতুন বন্ধু! নতুন বই খাতা নতুনের আলিঙ্গনে। সেই থেকেই পাপ পূর্ণ ধর্মের খাতা শুরু! কেউ ধর্ম শিক্ষায় ব্যস্ত! অন্যজন জেনারেল শিক্ষার পথে। ওখানেই নিহিত কারো জীবন যুদ্ধের দামামা!
কৈশোরে!
প্রেম বিরহ রাগ অনুরাগের দিনরাত। এক সুতায় বাঁধা কারো জীবন, আবার! মানুষ মানহুস খেলায় পর্দাপণ! সিঁড়িভাঙ্গা পথটা ভীষণ চিন্তায় রাখে সময়ে অসময়ে!
তারপরের দাপ তো জয় পরাজয়ের ঘোরে ঘোরে ঘুরপাক।
যৌবনা!
দশ শ্রেণি শেষে এগারো শ্রেণি কারো জয়ে! কারো-কারো উথান পতন জীবন সংসার অর্থের প্রভুত্বে হেরে যাওয়া! স্বর্গের সুখ কারো অর্থ দিয়ে কেনাবেচার সওদা শিক্ষার আরো একটি দাপ। এই-দাপ গড়িয়ে দেয়! ভেঙ্গে সাইক্লোন বেগে! আবার শক্তির পাঠশালাও এই স্থরে বিদ্ধমান শিক্ষক।
ভার!
ধর্মের ঝুলি হাতে ধর্ম শিক্ষার বাণী! এক ইশ্বর হৃদয়ে যাপিত ক্ষণেক্ষণে! পথহারা পথিক হারিয়ে যায় ভারে! নিজেকে খোঁজে এইপথ ওই পথের ধারে ধারে!
নতুনের সাধ কারো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে! কারো হাতে দঁড়ি সংসার সংগ্রাম দিনে রাতে আহাজারি! এই তো জীবন চলছেই মায়ের কোল থেকে।
দায়িত্ব!
পিতামাতা, স্ত্রী কন্যা পুত্র ময়! আশা আশায় ওদের কথা আমার দেহময়। আমি আছি ওরা জেনেই কাজের প্রস্তুতি নিয়েছে। স্মৃতির আকারে যার যেমন প্রতিফলন। ঠিক তেমনি রাজ্যজয়ী দায়িত্ব কাঁধে কাঁধে। ওরা আবার বসে থাকে দরজার আওয়াজের অপেক্ষায়। দেশ বিদেশের ঘন্টি কখন বাঁজবে কাঁনে। এ যে এক স্বার্থহীন দায়িত্ব বাহক।
আপসোস ধর্ম!
বাবা-মা চলে গিয়েছে সেকালের নিরবতায়! ওদের জায়গা গুলো খালি নেই তবুও! স্ত্রী তার পান চুনেই শান্তি পায়! হটাৎ হটাৎ ছেলে মেয়ের ভাবনায় দায়িত্ব জনকে আষ্টেপিষ্টে রাখা। ওরাও জনেজনে হাঁটছে সেই তিন পথে! ওই একই ভাবে আছে। চলছেই ধারায় ধারায়! আসা যাওয়ায় পথেই দেখা হয় সেই কালের প্রতিচ্ছবি। ওরাও জালে জালে বন্ধি অন্তরালের মরিচিকায়। জয় পরাজয় এই তো নিয়তি। কারো আপসোস এই সিঁড়িতে। কারো ধর্মের বাণীতে সেকালের আশা। কেউ কেউ পিতামাতার পথেই সন্তানের চারণভূমি নতুন আঁকারে তৈরিতে ব্যস্ত।
এক ও ভিন্ন!
সন্তান নাতি নাতনি সহধর্মিণী ছেলে! অভাব ভিন্ন করে রেখেছে শুরু থেকেই এদের। হিমশিম খাচ্ছে তবুও এক সংসারী এক করে রাখতে সকলকে, দিনরাত এককরে শ্রম বিক্রি। বেশ আছেন পথের মোড়ে মোড়ে যারা দেখেছে প্রদীপ হাতে দায়িত্ববান, যাদের রেখেছে অর্থের ছায়ায়। আবার পাবেনও ওই আলোর পথ থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছুকিছু দায়িত্বহীন।
তবুও হাঁটছি!
বাবা মায়ের পথে রথে রথে ডাঁকছে! একপা দুপা চলতে চলতে মুছে গিয়েছে নিষ্পাপ চিন্হ। আবার ছুঁটে যেতে চায় মায়ের কোলে। নতুনের বাহনায়। প্রেম বিরহের রাতদিন গুলাতে। ভাবনায় সমাধি নিশ্চুপ ভূমিকায়। ধর্ম কর্ম জীবনের পর্ব পূর্বের চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকার সময়টা আজ। নতুনের বন্ধু গুলো আছে নেই একালে সেকালে। সংসার সংসারী আজো হাঁটছেই আলো অন্ধকারের পথে পথে। শেষ ঘন্টার অপেক্ষায়।
হিসাবের!
খাতা খুলেছে বারবার জায়গা বদল মাত্র! অবস্থানে অবস্থানে হিসাব! সম্পদ রয়েছে যার ভাগাভাগি সমান সমান তার মানসিকতায় চারণ। যার সবমিলিয়ে সমানে সমান, তার প্রতিনিয়ত হিমশিম যন্ত্রনা দেহে বিদ্ধমান। ওরা তো প্রথমেই শূন্যটা কেটেছেটে নিয়েছে। হেরে যাওয়া সংসারী! মায়ের কোল মাঝেমাঝে নিদ্রায় আসে স্বপ্ন হয়ে। জাগ্রত হলেই মরিচিকার মায়াজাল!
তিন বন্ধুর শুরুটা।
প্রথম শ্রেনীতে একজন ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে। আরেকজন জেনারেল শিক্ষা। তৃতীয় জনের অভাব পরিশ্রম সেই একই সময় থেকে শুরু। ধর্মীয় শিক্ষার লক্ষ্যে পৌছে গিয়েছে, আছে সবাইকে নিয়ে একাত্র জীবন সংসারে। হিমশিম প্রভাত প্রহরে! জেনারেল শিক্ষাটা বড় চাকরির সহযোগী হয়েছে তাই সবাইকে নিয়ে ভালোই চলছে রাতদিন। পরিশ্রমে অভাব গোঁজানো যার সম্ভব হয়নি সেই আগের পোষাকেই পার করছে দিনকাল।
চলে যেতে হবে!
সব ভুলে চলে যেতে হবে ভেবেই নিরবতা ছুঁয়ে যায় শরীর জূড়ে। সেকালের ডাঁক ভেঁসে আসে অন্তর কাঁনে! যেতে হবে শুধু এই পথেই কোন বাঁধা নেই! নেই কারো হস্তক্ষেপ! মাটি অন্ধকার হয়ে বসে আছে ডাঁকছে নিরবে নিরবে। ভাবনায় ভাবনায় করছে পার, এইপারের জন ওইপারের জন। বাকি নেই যন্ত্রনার ভোজা যার মাথায়। সবাই আছে ওই পথের আশায়। শেষ স্বপ্ন টুকু পূরণের ইচ্ছে বিহীন ঘোরে। আজ কাল করে আসার অপেক্ষায়।
আজ তিনজন।
সুয়ে আছে মাটির চাদর বিছানো খাটে, নিত্য পরিশ্রমের দেহ খানা, জীবনের শেষ দিন অবধি যার শ্রম বিক্রি শেষ হয়নি। নেই কোন চিন্তা ভাগাভাগির! একাত্রে রাখার নিরন্তর প্রয়াস অন্ধকারে আজ হারিয়ে গিয়েছে। যন্ত্রনা মাথায় নিয়েই শুধু চিরতরে ঘুমিয়ে পড়েছে সেও। শুধু হেরে গিয়েছে সময়ের কাছে। ভুলে গিয়েছে পৃথিবী চিরন্তন বাসভূমি নয়, যে ছিলো অর্থের ছায়াতলে।
বাকিটা!
পৃথিবীর মোহে পড়ে যূগযূগ কাটিয়ে দিয়েছে এক মিথ্যা মরিচিকার পিছনে পিছনে। যে বন্ধুটি ছিলো অর্থের ছায়াতলে সেও আজ অন্ধকার ঘরে বন্দী, আলো ভরা বাড়ি নেই। নেই অর্থ গাড়িও। অভাব অনটন প্রতিনিয়ত ছিলো যার, সে আজ ওই ঘর খানায় সুয়ে আছে, নিত্য দিনের ঘাম ঝরানো দেহখান নিয়ে। এইকালে আজ আর নেই সেকালের চিন্তায়, যার রাতদিন নিদ্রা ছিলো না। পরিবার পরিজনের বন্ধন থেকে ছুঁটে গিয়েছে, মাটির দেয়ালে গড়া দরজা বিহীন ঘরে।
শেষ অনুভূতি।
বাতাস যা ধরা যায় না। দেখা যায় না। অনুভব অনুভূতি থেকে যার অস্তিত্ব আমরা খোঁজে নেই। মৃত্যু! অনুভূতির দরজা খুলে দিয়ে যায়। অনুভব চির নিরব করে দেয়। ওরাও মনে হয় নিরবে অনুভব করে গিয়েছে নিরবতার সব প্রতিধ্বনি।
অবশেষে নিরব।
নিরব হয়ে আছে আজ সকল কিছু,
নিরব হয়ে আছে বাতাস, ছায়া পিচু,
রোদ্র সমান আকাশ! পাহাড় নিচু,
নিরব আজ পথ! ঘাট! হাঁট! সব কিছু।
নিরব সকল মন, নিরব আশা, ভালোবাসা,
সকল কথায় এত নিরবতা! এত নিরব ভূমি।
স্বপ্ন সাধনে নিরব ওরে, তীব্র স্রোতো নিরব,
সবুজ পতায়! বাতাস ছোয়া চুপটি হয়ে নিরব।
কেন হাহাকার সুয়ে থাকা দেহের নিরব ক্ষনে,
কেন এত মানুষের ভিড়! নিরব জনে জনে।
আশার দেহ আজ কেন এত নিরব সন্ধি হয়ে,
একলা একা হাজতে আজ বন্ধি কয়েদি রয়ে।
নিশিকার রজনী সাঁজে কালো আধাঁর নিরব,
ঝিঝিপোঁকার বন্ধনায়। টিপটিপ রয়ে নিরব।
বাঁকে বাঁকে নদীর জলে মিশে বাতাসের সুর,
এই পাড়ের মানুষ সবই! নিরব অচিনপুর।
নিরবে যত সব আজ, নিরব ঝর্নার বাঁজ,
নিরব বৈশাখী হাওয়া, আমার চোঁখের চাওয়া,
আমি শুয়ে আছি শেষ খাটিয়ায়, নিরব নিথর দেহ।
আমায় তোমরা নিরব চোঁখে একবার দেখে যেও।
আসলে!
সব কিছুই মরিচিকায় আবদ্ধ!
আমরা বেঁচে আছি এটাই আশ্চার্য! ভেবে দেখুন।
মরে গিয়েছে শুনে আপসোস করতে নেই।
ইহায় চিরন্তন সত্যি!