সেলিম চৌধুরী নিজস্ব সংবাদদাতাঃ-
চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে প্রধানমন্ত্রীর প্রদক্ত করোনাকালিন সহায়তা সরকারি প্রনোদনার টাকা প্রকৃত খামারীদের না দেয়া এবং বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বেনামে বিল ভাউছার বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অফিসের চতুর্থ শেণির এক কর্মচারী অবৈধভাবে নিজের নামে স্ত্রী ও ছেলের নামেও প্রনোদনার টাকা হাতিয়ে নেয়।
জানা গেছে, খামারীদের জন্য এলডিডিপি প্রজেক্টের অধিনে পটিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ১৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার গবাদী পশু ও হাঁস মুরগী, গরু ছাগালের খামারী এবং পল্ট্রি ফার্মের মালিকদের করোনাকালিন প্রধানমন্ত্রীর প্রদক্ত সহায়তা প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। উপজেলার গত জানুয়ারিতে ১৮০০ জন এবং ২য় দফায় ৩৭০ জনকে এ সহায়তা করা হয়। সহায়তার পরিমান জনপ্রতি ২২ হাজার থেকে ১১ হাজার পর্যন্ত। সহায়তা নেয়ার তালিকায় প্রাণিসম্পদ অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মুজিবুর রহমান তার স্ত্রী আমেনা বেগম ও তার ছেলে সিএনজি চালকসহ পরিবারের ৮/১০জন খামারী সেজে অনুদানের টাকা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া অনেকে খামারী না হয়েও প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্বীয়-স্বজনকে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা দেয়া হয়েছে। উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ফখরুল ইসলাম ফারুকী নামের এক খামারীর অভিযোগ আমার নাম তালিকায় থাকলেও আমার নাম কেটে অফিসের মুজিবুর রহমানের নাম ঢুকিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত আসার খবরে তার বাসার ছাঁদের উপর রাতারাতি একটি মুরগীর ফার্ম তৈরী করে। সম্প্রতি প্রাণী প্রদর্শনী মেলার নামেও ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার ভুয়া বিল ভাউছার। অফিসের কর্মচারী মুজিবের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন সময় খামারীরা জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীর কাছেও একাধিক অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। অভিযোগের বিষয়ে মুজিবুর রহমান অফিসের বসের নির্দেশে বস করেছে বলে জানান। এলডিডিপি প্রজেক্টের দায়িত্বরত ডা. প্রিয়া ঘোষ জানান, সহায়তার টাকা বিতরণে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে আমার কোন হাত থাকার কথা না, মাঠ পর্যায় থেকে আমার কাছে তালিকা আসে আমি সেটা ফাইনাল করি এর বাইরে আমার কিছু করার নাই।এছাড়াও ন্যাশনাল এগ্রিকালচার ট্যাকনলোজিস্ট প্রজেক্ট (এনএটিপি) বরাদ্দকৃত প্রতি বছর ৪০ লক্ষ টাকা করে গত ১০ বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকা নামে বেনামে ভুয়া বিল ভাউছার বানানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি হলেও মুজিবুর রহমানের গত ১০ বছরের নিজের হাতে লেখা অধিকাংশ বিল ভাউছার। ২০০৮ সালে মুজিবুর রহমান ড্রেসার পদে পটিয়া প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগদান করেন। মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন খামারী এবং পশু পাখিদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ টাকার বিনিময়ে বাইরে বিক্রি করা, অফিসের বিভিন্ন নামে ভুয়া বিল ভাউছার বানিয়ে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া। বাড়ি চন্দনাইশের এলহাবাদ হলেও পটিয়া কুচুয়াই ইউনিয়েনে ফারুকী পাড়ায় ১৫ লক্ষ টাকায় জায়গা কিনে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে মোর্ট প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মান করেছে ভবন। এছাড়াও নামে বেনামে প্রায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। করোনাকালিন প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা সহায়তার তালিকাটি ম্যাডাম থাকা অবস্থায় করা হয়েছে সেখানে কোন অনিয়ম দুর্নীতি হয়ে থাকলে ম্যাডাম বলতে পারবেন বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটিনারী সার্জন ডা. সুব্রত সরকার জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্প কর্মকর্তা ডা. জপু চক্রবর্ত্তী বলেন, খামারীদের প্রণোদনার টাকা বিতরণের অফিসের কেউ নিয়ে থাকলে এবং কোন ধরণের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকার কারণে কেউ অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।