

রিগ্যান এসকান্দারঃ
জীবন একটা বড় কবিতার মতো। কত বড়? হয়তো বাবার মতো বড়। আমাদের ভেতর সবচেয়ে বড় হলেন আমাদের বাবা। সবার আগে বিয়েও হয়েছিল বাবার। সবার আগে পরিবারও হলো বাবার। বাবার বুকপকেটে ছাবিয়া বেগম। আমার মা। একটা বকুল ফুল। এই ফুল পুড়েছে যত, আমরা ততই বড় হয়েছি। তবু আমরা শৈশব ডিঙিয়ে, কৈশোর ডিঙিয়ে বাবার কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। এসব দেখে আমাদের পোড়া মা খুব হাসতো। মায়ের হাসি দেখতে দেখতে একদিন আমি কবিতা লিখতে শুরু করলাম। এই কবিতায় মায়ের কথা থাকতো। দুই বোন কুসুম কুসুম মালা ও পিয়ার কথাও থাকতো। শুধু আমার কথা নেই। কেন আমার কথা নেই? আমি কেন অনুপস্থিত? কারণ, আমার কথা জমালেই মা চুরি করে নেয়। যদি আমি পুড়ে যায় এই ভয়ে। ভাবলাম, মাকে একদিন হাতেনাতে ধরব আমার সমস্ত কবিতাসহ। আচ্ছা, আমি যদি কোনোদিন কবিতাসহ মাকে হাতেনাতে ধরে ফেলি? মা হয়তো খুব আনন্দ পাবে। কিছু কিছু চুরি ধরা পড়ে গেলে খুব আনন্দ লাগে। যেমন চুরি করে আমার দিকে কোনো প্রেমিকা যখন তাকিয়ে থাকে। তখন যদি ধরা পড়ে যায়। তখন এসব প্রেমিকাদের নামও আমার কবিতায় চলে আসে। প্রেমিকাদের নামের একটা দারুণ রহস্য আছে। আমি এইসমস্ত নাম বহুবার কাগজে লিখে আগুনে পুড়িয়েছি। পোড়ে না। তাহলে মা কীভাবে আমাদের সংসারে পুড়ে গেল? এ কথা জানতে আমাদের সবার ভেতর বয়োজ্যেষ্ঠ বাবাকে একদিন একা পেয়ে খুব করে ধরেছিলাম। বাবা বলেছিলেন, তোদের মা আগুনে পোড়েনি, জ্যোৎস্নায় পুড়েছে।
আচ্ছা, এসব জ্যোৎস্না বাবা কোথা থেকে আমদানি করে? বাবাকে এসব জ্যোৎস্না কে সাপ্লাই দেয়? হয়তো মন মহাশয়। বাবার অস্তাদ। ছোটবেলায় বাবার সাথে আমাকে যতবার দেখেছেন, প্রতিবারই চকলেট কিনে দিতেন। বাবার ভাঙা সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে বাবাই একদিন আমাকে বলেছিলেন, আকাশবাজারে মন মহাশয়ের একটা বড়সড় জ্যোৎস্নার আড়ত আছে।
সে তো অনেক বছর আগেকার কথা। মন মহাশয় কি আজো বেঁচে আছেন? আছেন। আমাদের পাড়ায় প্রচলিত আছে, পৃথিবীর শেষ মানুষ যত দিন বেঁচে থাকবেন, তিনিও ততদিন বেঁচে থাকবেন। আমি আকাশবাজারে জ্যোৎস্নার আড়তে যাব। আড়ত থেকে কিছু জ্যোৎস্না নিয়ে বাবার মতো ভাঙা সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফিরব। ফেরার পথে জ্যোৎস্নাগুলো রাখব কোথায় আমি? বুকপকেটে?
আচ্ছা, আমি কি এই গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরব?
‘বাবার জ্যোৎস্নায় পুড়েছে বকুল-ছাবিয়া বেগম।
আমার জ্যোৎস্নায় কে পুড়বে গো কে পুড়বে?’
লালন শাহ বলেছিল, গানের উত্তর দিতে হয় গান দিয়েই। তুমি কি আর এই গানের উত্তর জানো? এই কবিতার উত্তর? সোনিয়া আক্তার!