এস এম খলিলুর রহমান,খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো চীফঃ
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার যশোরের বেনাপোল উপজেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুলসহ ৫ জনকে ৮ টি পিস্তলসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে আজ দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর ডিএমপি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে বেনাপোলের বহুল আলোচিত ২ (শতাধিক) অস্ত্র বিকিনির হোতা আকুলসহ চক্রের ৫ জন সদস্য আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, আকুল হোসেন, ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল আজিম, ফারুক হোসেন, এবং ফজলুর রহমান। তারা সবাই যশোর জেলার বেনাপোল এবং শার্শা থানার স্থায়ী বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরোও জানানো হয়, ঢাকা মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ব্যবসায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, ৮ টি বিদেশি পিস্তল, ১৬ টি ম্যাগাজিন ও ৮ টি গুলি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের প্রধান আকুল হোসেন ২০১৪ সাল থেকে ২ (শতাধিক) অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছে। অস্ত্র চোরাচালানসহ চক্রের সদস্যরা তক্ষক প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড স্মাগলিং, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা, আইস মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। আটক মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার মূল হোতা ছাত্রলীগ নেতা আকুল ২০১৪ সালের ১৬ আগস্ট রাতে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল। আদালত থেকে জামিন পেয়ে সে আবারও অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং সে এলাকায় একটি স্বয়ংক্রিয় চক্র তৈরি করেন। এ চক্রের মাধ্যমে সে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে ডিএমপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, বিপিএম বলেন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীর একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা যশোরের বেনাপোল হতে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে তা সারা দেশে অপরাধীদের নিকট সরবরাহ করছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী যশোর জেলার বেনাপোল এলাকার কে বা কারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত তা জানার লক্ষ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগৃহীত হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক অস্ত্র কেনা-বেচা দলের সদস্যরা বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি নিয়ে অপরাধীদের নিকট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রাইভেটকার যোগে গাবতলী বাস স্ট্যান্ড হয়ে ঢাকায় ঢুকবে মর্মে জানা যায়। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ রাতে গোয়েন্দা বিভাগের (গুলশান) একাধিক টিম দারুস সালাম থানা এলাকার দিয়াবাড়ী গামী রাস্তা, বেড়ীবাধগামী রাস্তা ও কল্যাণপুরগামী রাস্তায় অবস্থান করে। রাত ৩ টা ১০ মিনিটের দিকে একটি সিলভার রংয়ের প্রাইভেটকার গাবতলী ব্রিজের ইউলুপ দিয়ে সন্দেহজনক ভাবে দ্রুত গতিতে উত্তর দিকে যেতে থাকলে দিয়াবাড়ী এলাকায় অবস্থানরত টিমকে বেতার মারফত রাস্তায় বেরিকেড দিতে বলা হয় এবং অন্য টিমগুলো প্রাইভেটকারটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে।
এসময়ে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় জনগণের সহায়তায় রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি দিয়ে দারুস সালাম থানার বেঁড়ীবাধ বড় বাজার এলাকায় রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করে। জ্যামে আটকা পড়া গাড়িটিকে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা অভিযুক্তদেরসহ আটক করে। সাক্ষীর উপস্থিতিতে আটককৃতদের যথাযথ তল্লাশী করে উপরোক্ত অস্ত্র-গুলি জব্দ করা হয়।
তিনি আরোও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, এই অস্ত্র ব্যাবসা চক্রের মূলহোতা আকুল নিজে বা তার বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অস্ত্র সরবরাহ করতো।
সে ২০১৪ সাল থেকে ২ (শতাধিক) অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃতরা অস্ত্র চোরাচালানসহ চক্রের সদস্যরা তক্ষক প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড স্মাগলিং, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা ও মাদক আইস এর ব্যবসা করে আসছে।
ভারতে তৈরি এসব অবৈধ অস্ত্র ২৫ (হাজার) থেকে ৫০ (হাজার) টাকায় ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্টির নিকট ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রয় করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।