

মোঃ আইনুল হক পীরগঞ্জ ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
বৈশ্বিক মহামারি করোনার যাঁতাকলে যখন সারা দুনিয়ার মানুষ গৃহবন্দি। বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির। লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকুরী হারিয়ে চোখে মুখে চিন্তার বলিরেখা দেখা দিয়েছে । ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দাদশায় ব্যবসায়ীরা দিক-বেদিক ছুটছে, ঠিক তখন কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীকে অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। করোনাকালীন সময় সারা পৃথিবী অচল হলেও সচল ছিল নেট দুনিয়া। এই অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে নেটে মনোনিবেশ করেন কিছু উদ্যমী তরুণ- তরুণী। খুঁজতে থাকেন আয়ের বিকল্প উৎস। স্বপ্ন দেখেন নিজে। স্বপ্ন দেখান অন্যকে। স্বপ্নকে স্বপ্নের ভেতর সীমাবদ্ধ না রেখে স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেমে পড়েন কাজে। উদ্যোগ নেন, হন উদ্যোক্তা। এতে নিজেকে স্ব-নির্ভর করার ইচ্ছার পাশাপাশি বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ইচ্ছাও জাগ্রত হয়। এরকম একজন স্বপ্ন বিলাসী নারী উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান সাথী। সাথীর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়েই এই প্রতিবেদন।
নয়া উদ্যোক্তা সাথী প্রথমে মাত্র ৬ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। মনে ভয় ও শংকা থাকলেও ভয়কে জয় করার দৃঢ়তা সাথীর পথচলায় সাহস যুগিয়েছে। নতুন ব্যবসা, পুরোনো পণ্য মার্কেটে কতটুকু সাড়া ফেলতে পারবে, এই নিয়ে সংশয় ছিল সাথীর। ব্যবসায়ী পিতা আলা উদ্দিন বুলুর প্রেরণায় সাথী সাহস পায়। ছোট পরিসরে নেট দুনিয়ায় প্রচার করেন তার নয়া ব্যবসার ইতিবৃত্ত। খুলেন ফেসবুক পেইজ ওঝজঅঞ’ঝ ডঙজখউ। পেইজটি কয়েকদিনের মধ্যেই অনলাইন দুনিয়ায় বেশ পরিচিতি লাভ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে থাকে অর্ডার। সততা, নিষ্ঠা ও ব্যবসায়িক মনোভাব তথা সাথীর অমায়িক ব্যবহারে বাড়তে থাকে বিপনন।
ঠাকুরগাঁও’র হরিপুর মসলিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী উদ্যমী সাথী কালবিলম্ব না করে একঝাঁক মহিলাকে দিয়ে শুরু করেন নঁকশী কাঁথা তৈরীর হস্তশিল্প কারখানা। প্লেন কাপড়ের উপর নঁকশী করা পাঞ্জাবী তৈরী করে ক্রেতাদের দৃিষ্ট কাড়েন খুব সহজে।
একের পর এক অর্ডার ডেলিভারী দিতে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে সাথীকে। ক্রমশই তার কারখানার পরিধি বাড়ছে। সাথে বাড়ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। মাত্র ১৪ মাসে সাথীর মূলধন ১৫ লক্ষ টাকায় ছাড়িয়ে গেছে। এতো অল্প সময়ে ৬ হাজার মূলধনের ব্যবসা থেকে ১৫ লক্ষ টাকার ব্যবসায় উন্নীত করার নজির খুব কমই দেখা যায়।
উত্তর বাংলার ঠাকুরগাঁও’র হরিপুরের মেয়ে ইশরাত জাহান সাথী। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান সাথীর রয়েছে দুই ভাই ও এক বোন। অন্য দশজন বাঙ্গালী মেয়ের মতই সাথী বেড়ে ওঠেন। রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান সাথীর বর্তমান বয়স ২৩ বছর। অসম্ভব পরিশ্রমী সাথী পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের নকঁশী কাঁথায় নিজের স্বপ্নের জাল বুনেন। নকঁশী কাঁথায় অংকন করেন চিরায়ত বাঙ্গালীর ঐতিহ্য। বাংলার কৃষ্টি নিয়ে যেতে চান বহিবিশ্বে। স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়। স্বপ্নকে জয় করে আজ তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সেজে বেকার তরুণদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজস্ব ঢংগে শৈল্পিক কারুকাজ। যা তরুণদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। সরকারি সুযোগ- সুবিধা পেলে উদীয়মান উদ্যোক্তা সাথী তার নঁকশী কারখানা আরো সম্প্রসারিত করতে পারবে। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সহায়ক হবে।