

এস এম খলিলুর রহমান,খুলনা বিভাগীয় ব্যুরোচীফঃ
৩১ অক্টোবর ২০২১ রবিবার যশোরে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে কেশবপুর ডিগ্রী কলেজের ছাত্র মোটরসাইকেল চালক রাসেল হত্যার ২ জন যুবককে আটক করেন। আটককৃতরা হলেন, (১) মাসুদ হোসেন (১৯), কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর গ্রামের আব্দুর রহমান সর্দারের পুত্র, ও তার সহযোগী (২) অহীদ হাসান (১৯), কেশবপুর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের আব্দুর রউফ মোড়লের পুত্র, সর্ব জেলা যশোর। ভিকটিমের মোবাইল ফোন উদ্ধার হত্যা কাণ্ডের কাজে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ গত ১৭ আগস্ট ২০২১ অনুমান সকাল ১০ টার দিকে কেশবপুর থানাধীন সাগড়দাড়ি চিংড়া পূর্বপাড়া গ্রামস্থ চিংড়া হতে শ্রীপুরগামী (টেপার মাঠ) কাঁচা রাস্তার পাশে জনৈক আয়সা বেগমের ধানক্ষেত থেকে রাসেল হোসেন (২৬), কেশবপুর উপজেলার সাবদিয়া গ্রামের মাজিদ মোড়লের পুত্র একজন ভাড়ায় মটরসাইকেল চালক এর লাশ উদ্ধার করেন কেশবপুর থানা পুলিশের সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত রাসেল ভাড়ায় মটরসাইকেল চালাতো। গত ১৬ আগস্ট ২০২১ বিকেল অনুমান ৪ টা ৩০ মিনিটের দিকে ভাড়ায় মটরসাইকেল চালানোর জন্য বাড়ী থেকে বের হয়ে কেশবপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় রাসেল। রাত অনুমান রাত ১১ টা ৫০ মিনিটের দিকে রাসেলের মোবাইলে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ১৭ আগস্ট ২০২১ রাত অনুমান ২ টা ৩০ মিনিটের দিকে ঘোপসানা রোড থেকে ভিকটিম রাসেলের মটরসাইকেলটি পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া যায় না। পরের দিন সকালে লোক মারফত রাসেলের পরিবার জানতে পারেন চিংড়া (ডেপার মাঠে) এক জন যুবকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রাসেলের মৃতদেহ সনাক্ত করে তার পরিবারের লোকজন। এই সংক্রান্তে নিহত রাসেলের পিতা মাজিদ মোড়ল বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় এজাহার দায়ের করেন, কেশবপুর থানার মামলা নং-০৩, তাং-১৭/০৮/২০২১ তারিখ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয় মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় তদন্তভার ন্যাস্ত করেন। গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার, পিপিএম এর দিক-নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন, মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে গোপন তথ্য সংগ্রহ আসামীদের সনাক্তপূর্বক আটকের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
গত ৩০ অক্টোবর ২০২১ শনিবার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ পরিদর্শক শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন ও এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএম এর নেতৃত্বে একটি চৌকশ টিম কেশবপুর থানাধীন হাসানপুর, বিষ্ণপুর, সাগরদাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যার সাথে জড়িত সন্ধেহে ২ জন যুবককে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, হত্যার কাজে ব্যবহৃত ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আর্থিক ভাবে লাভ হওয়ার কারনে তারা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। এরপর তারা গত ১৬ আগস্ট ২০২১ ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চাকু নিয়ে কেশবপুর দিয়ে খুলনায় রওনা হয়। সেখানে ছিনতাই করতে না পারায় রাত অনুমান ১১ টার সময় খুলনা থেকে ট্রাকে করে চুকনগর চলে আসে। তারপর ভিকটিম মটরসাইকেল চালক রাসেলকে ৩ (শত) টাকা ভাড়া চুক্তিতে সাগরদাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে মামলার ঘটনাস্থল চিংড়া টেপার মাঠের মধ্যে নিরিবিলি জনমানব শুন্য এলাকায় নিয়ে ভিকটিম রাসেলকে চাকু/ছুরির ভয় দেখাইয়া মটরসাইকেলটি ছিনতাই করতে চায়। রাসেল বাঁধ সাজলে একপর্যায়ে চাকু দ্বারা পেটে আঘাত করে। নিহত রাসেল মোবাইল ফোনে বাচ্চার ছবি দেখিয়ে জীবন ভিক্ষা চাইলেও ঘাতক মাসুদ ও অহিদ তাকে জীবনে বাঁচতে না দিয়ে উপর্জুপুরি চাকু/ছুরি আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে গলার শ্বাসনালী কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। কিন্তু ঘাতকরা হত্যার কথা চিন্তা করে মটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে ঘোপসানা রোডে ফেলে দেয় এবং অনুমান ১০ থেকে ১৫ দিন পর ভিকটিম রাসেলের মোবাইল ফোনটি হাসানপুর বাজারে ১টি মুদি দোকানদার শহিদুলের নিকট ৩ (হাজার) টাকায় বিক্রি করেন মর্মে তথ্য প্রমান পাওয়া যায়।