

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের সিংড়া উপজেলার ৫ নং চামারী ইউনিয়নের অবহেলিত গ্রাম আনন্দনগর। আত্রাই নদী ও চলনবিল দিয়ে চারিপাশে ঘেরা এই গ্রাম। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে এ গ্রামের মানুষের মনে সুখ নাই, হারিয়ে গেছে আনন্দ। শুস্ক মৌসুম কিংবা বর্ষা মৌসুম ১২ মাসেই দুর্ভোগ লেগেই থাকে। রাস্তাঘাট না থাকার কারনে একদিকে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পায় না। অপরদিকে স্বাস্থ্য, শিক্ষায় পিছিয়ে গ্রামের মানুষ। এজন্য আনন্দনগর ও কৃষ্ণনগর জলার উপর ব্রীজ নির্মানের দাবি হাজার হাজার মানুষের। প্রতিবছর বন্যায় নদী ভাঙ্গনের কবলে বাড়িঘর ভেঙ্গে যায়।
ব্রীজ এবং গ্রাম রক্ষা বাঁধের দাবি স্থানীয়দের। আনন্দনগর গ্রাম দিয়ে বয়ে গেছে একটি রাস্তা। যার কিছু অংশ ইট পারা ছিল বর্তমানেইটের সলিং তুলে দিয়ে ৫০০ মিটার কার্পেটিং রাস্তা হয়েছে , বাঁকি অংশ বর্ষায় ডুবে যায় আর শুস্ক মৌসুমে বৃষ্টি হলে চলাচল করা দুঃসহ হয়ে পড়ে। এ রাস্তা দিয়ে আনন্দনগর, কৃষ্ণনগর গ্রামের মানুষ ছাড়াও ডাহিয়া, বেড়াবাড়ী, পানলি, কাউয়া টিকরি, আয়েস, বিয়াস এবং বারুহাস এর লোকজন বিলদহর বাজারে নিয়মিত যাতায়াত করে। দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। চলন বিলের বৃহৎ অংশ হাজার হাজার টন ধান এই রাস্তা দিয়ে বাজারে নিয়ে ক্রয় বিক্রয় হয়। কিন্তু রাস্তার কারনে দাম পায় না কৃষকরা। জানা যায়, আনন্দনগর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে ৭টি মসজিদ রয়েছে , দুইটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ টি ব্র্যাক স্কুল, ১ টি মাদ্রাসা , ১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সরকারি এবং বেসরকারি চাকরীজীবি প্রায় শতাধিক। এছাড়া ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশা রয়েছে। বর্ষার সময় রাস্তা ডুবে যায়, নৌকার অভাবে কিংবা নিরাপত্তার ভয়ে ছেলে মেয়েরা ক্লাসে যেতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এলাকার ছেলেমেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে হয় না। চিকিৎসা সেবার অভাবে রাস্তায় মারা যায়।
কারন গ্রাম থেকে বের করে আনতে ১ ঘন্টা ও লেগে যায়। শুস্ক মৌসুমে মাচায় করে আর বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায় থাকে না। কোনো রকম যানবাহন চলাচল করতে পারে না। চামারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম মৃধা জানান, আনননগর অবহেলিত গ্রাম। আমরা বন্যার সময় ঐ এলাকার জনসাধারণ কে সাহায্য সহযোগিতা করেছি। জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবি একটা ব্রীজ নির্মানের জন্য। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি মহোদয় ও বিষয়টি অবগত আছেন৷ নৌকার অপ্রতুলতা ও বিলুপ্তি এবং নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোতে কুলিয়ে উঠছে না অত্র এলাকার জনগণ। এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের দাবি, আনন্দনগর ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঝবর্তী স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হলে মূলনদীর স্রোতপ্রবাহ গতিপথ পরিবর্তন করে সম্মুখগামী হবে। এতে গ্রামগুলো ভাঙ্গনের শিকার হবে না। অল্প বন্যায় তলিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকবে না। তবে বাঁধ নির্মাণে বাধা দেওয়ার মত ঘটনা না কি ইতোপূর্বে ঘটেছে। যার কারণে ব্রীজ নির্মাণ বা রাবার ড্রাম নির্মাণ করলে বিষয়টি আরও গুরুত্ববহ হতে পারে বলে স্থানীয় জনগণ মনে করেন। এছাড়া অনেকে মনে করেন, বিলদহর বাজার থেকে ব্রীজ হয়ে কৃষ্ণনগর ও আনন্দনগরের মধ্যে দিয়ে ডাহিয়া পর্যন্ত নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলে চলনবিলে পর্যটনের একটা সম্ভবনা আছে। নদীভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত অত্র এলাকার দিকে নজর দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করছি। একটি রাবার ড্রাম ব্রীজ বা নদীরক্ষা বাঁধ যদি একটি জনপদের সার্বিক নিরাপত্তা ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তবে এটি সরকারের উল্লেখযোগ্য সফলতা হবে কি না? দ্রুত সময়ে আমরা আশা করি একটা ফলাফল পাবো।