

হরিনাকুন্ডু( ঝিনাইদহ) থেকে রাব্বুল হুসাইন :
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের ওমবাদ মন্ডলের পুত্র গ্রাম্য লিডার আমিরুলের বিরুদ্ধে বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধি মাতৃকালীন ভাতার কার্ড দেয়ার নাম করে হাজার হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় উপজেলার ৭ নং রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে আমিরুল প্রভাবশালী এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেয়ারম্যানের অনুসারী হওয়ায় এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমিরুল সোহাগপুর গ্রামের ওমবাদ মন্ডলের ছেলে। সে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এভাবে ওই এলাকার প্রায় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সোহাগপুর এলাকার বাসিন্দা ফিরোজা খাতুন জানান,সে তার স্বামী মজিবার রহমানের জন্য একটি বয়স্ক ভাতা কার্ডে জন্য তথা কথিত নেতা আমিরুলের কাছে ৪ হাজার ৫০০’শত টাকা দিই।এখন সে টাকাও দেয় না কার্ড ও দেয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোহাগপুর গ্রামের এক গৃহবধূ জানান, আমার দুই ছেলেই স্রোবন প্রতিবন্ধি, আমার ছেলের প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দেবে বলে টাকা চাই দালাল আমিরুলের ক্ষপরে পড়ে আমি ৭ হাজার টাকা দিয়। আজ নয় কাল নয় বলে অনেক দিন যাবৎ আমাকে ঘুরায়,কার্ড যখন আর না হলো খুব ঘুরা ঘুরি করলে ছয় হাজার টাকা ফেরত দেয় এখনো আমি এই আমিরুলের কাছে ১০০০ হাজার টাকা পাবো বলে।
একই গ্রামের মৃত গোলাম খাঁ চান্দা এর স্ত্রী হতভাগী মর্জিনা খাতুন জানান, আমার স্বামী নেই, অনেক কষ্ট করে আমার সংসার চালাই,আমার একটি ভাতার কার্ডের জন্য অনেক ঘুরা ঘুরি করেও যখন আর হলো না,তখন আমিরুল আমার কার্ড করে দেয়ার নাম করে টাকা চাই, নিরুপায় হয়ে আমিরুলের কাছে আমার একটি বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্য ১ হাজার পাঁচ শত টাকা দিই,কিন্তু আমার কার্ড কই? আজ আমার আর টাকাও ফেরত দেয়না, কার্ডও দেয়না,দেখাও করেনা।
কিন্তু এখানেই শেষ নয় প্রেগন্যান্ট ভাতার কার্ড দেয়ার নামেও চালিয়েছেন অবাধ বানিজ্য সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়,তিনি একই গ্রামের গোলাম রসুল কটার কাছ থেকে তার স্ত্রী রত্না জন্য ৪ হাজার ২০০শত’টাকা নিলে মেলেনি একটি কার্ড।
গোলাম রসুল ও কটা সাংবাদিকদের জানান, আমার স্ত্রীর কার্ডের কথা বলে ৪ হাজার দুইশত টাকা নেয়,পরে যখন আর দিতে পারলো না তখন আমি একটি চাপ দিলে সে ১ হাজার ৯শত’ টাকা ফেরত দেয়। আমি আমার বাকী টাকাও ফেরত চাই।
এব্যাপার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুন্সী ফিরোজা সুলতানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রেগন্যান্ট ভাতার কোনও বরাদ্দ এখনো আসেনি। এব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শতকধারী সোহাগপুর গ্রামের নেতা আমিরুল আমার কাছ থেকে ১০ টাকা কেজির সরকারী চাউলের কার্ড করে দেয়ার নাম করে আমার কাছে এসে ২ হাজার ২’শত টাকা নেয়। আজ দুই বছর পার হলেও আমি আজও পেলাম না,আমি এই ভণ্ড প্রতারকের বিচার দাবি করছি বলে জানান সোহাগপুর উত্তর পাড়া গ্রামের দিনমুজুরী আনোয়ার হোসেন। তিনি আরও বলেন এই নেতা সাবেক চেয়ারম্যান রাসেলের নাম ভাংগিয়ে আরও অনেকের কাছে থেকে অনেক টাকা নিয়েছে।
এব্যাপারে গ্রাম্য নেতা আমিরুলের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওভাই সব মিথ্যা,আমি চেয়ারম্যান এর লোক,আপনি একটু দেখা করেন।
নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে খুলনা মেট্রো পলিটন পুলিশ সদস্য রাজু আহম্মেদে প্রতিবাদ করলে গুণ্ডা বানিজ্য সম্রাট আমার চাকরী খেয়ে নেবেন বলেও হুমকী দেয়।
এদিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রানী সাংবাদিকদের বলেন, গ্রাম্য নেতা আমিরুলের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি বা আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে কমিটি গঠন করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড নিয়ে কেউ বানিজ্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করতে কোনও টাকা লাগে না।