সোহেল রানা নীলফামারী॥
সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা ভার্ষনে দশম শ্রেণীতে পড়ে নাফিস ইসতে তৌফিক অন্তু। মহামারী করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ার ভূত ঘাড়ে চাপে তার। বার বার চেষ্টা করে ব্যার্থ হলেও হাল ছাড়েনি কখনও। প্রথমে স্টাপলারের পিন বের করে চেন তৈরী করে রেকর্ড গড়ার চেষ্টা ছিলো অন্তুর। পরে দ্রুততম সময়ে ১০টি সার্জিক্যাল মাস্ক পরিধান ও হাতের স্পর্স ছাড়াই কলা খেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয় সে। অল্প বয়সে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ায় অনন্দিত অন্তুর পরিবারের সদস্য, বিদ্যালয়ের সহপাঠীসহ শিক্ষক মন্ডলী।
নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলার নীলকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ইউনূছ আলী ও নাসমুন নাহার দম্পত্তির দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান নাফিস ইসতে অন্তু। অন্তুর বাবা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ের চাকুরী করলেও মা একজন গৃহিনী। সে ছাত্র হিসেবেও মোটামুটি ভালো। কিন্তু পড়ালেখার পাশিপাশি ঘরে বসে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বিভিন্ন উপাদান উদ্ভাবনের চেষ্টাও চলে তার। তবে ছোট বেলা থেকেই অন্তুর স্বপ্ন একজন ইঞ্জিয়ার হওয়ার।
রেকর্ড গড়ার প্রস্তুতি নিয়ে গত বছরের ১৩ই এপ্রিল গিনেস ওয়ার্ল্ডে আবেদন করে অন্তু । ৪মে গিনেস কর্তৃপক্ষ আবেদন গ্রহণ করে ১০টি সার্জিক্যাল মাস্ক দ্রুততম পরিধানের অনুমতি প্রদান করে। অবশেষে ১৪জুলাই দীর্ঘদিনের পরিশ্রম সফল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ পিলের ৭.৩৫সেকেন্ডের রেকর্ড ভেঙ্গে ৭.১৬সেকেন্ডে ১০টি মাস্ক পরে গিনেস ওয়ার্ল্ডে রেকর্ড গড়ায় অন্তু। ৬নভেম্বর রাতে গিনেস ওয়ার্ল্ডের বার্তা এসেছে সফলতার। একই তারিখে হাতের ব্যবহার ছাড়াই একটি কলা মুখ দিয়েই ছোলে আবার খেয়ে কানাডার মাইক জ্যাকের ৩৭.৭ সেকেন্ডের রেকর্ড ভেঙ্গেছে ৩০.৭ সেকেন্ডে। আর ১৯ডিস্বেবর হাতে পেয়েছে গিনেস ওয়াল্ডের দুটি সনদপত্র।
নাফিস ইসতে তৌফিক অন্তু বলে, করোনা কালীন সময়ে পড়ালেখার পাশাপাশি টেলিভিশনে দেখে ইচ্ছে জাগে গিনেস ওয়ার্ল্ডে রেকর্ড গড়ার। তারপর সে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে দুটি রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছি। আর একটি রেকর্ড গড়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে আমার ইচ্ছে বড় হয়ে একজন হওয়ার। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেনো আমার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারি।
অন্তুর মা নাসমুন নাহার বলেন, আমার ছেলে ছোট থেকেই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। পোষাক আশাক কেনার তার কোন চাহিদা নাই। আমরা যা কিনে দেই সে তাতেই খুঁশি থাকে।একটু সময় পেলেই যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে। প্রতিনিয়তই তার নতুন কিছু অবিস্কারের চিন্তা। তবে সে যে বিশ্ব রেকর্ড করেছে এতে আমরা গর্বিত।
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেঃ কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিএস,সিগস্ বলেন, নিজের প্রচেষ্টায় দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র গিনেজ ওয়ার্ল্ডে দুটি রেকর্ড গড়েছে। আমরা শিক্ষরাই তাকে অনেক হেল্প করেছি। ২০২১সালে শুধু অন্তুয় নয় আমাদের প্রতিষ্ঠানের আরও দু’জন বিভিন্ন পর্যায়ে সেরা খাতায় নাম লিখিয়েছে। আমরা চাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো কিছু করুক। তাদের প্রতিভাগুলো সারা বিশ্বে তুলে ধরুক। আমাদের শিক্ষকমন্ডলীরা তাদের সর্বদা সহযোগিতা করে যাবে। এমন কি আর্থিকভাবে কেউ অসচ্ছল থাকলেও তাদের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো কিছু করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এজন্য আমরা শ্রেষ্ঠ কিছু শিক্ষার্থীর ছবি তুলে প্রধান ফটোকের সামনে ঝুলিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের পরামর্শ থাকবে শুধু রেকর্ড গড়া নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না, পড়ালেখার প্রতিও কঠোর নজর রাখতে হবে। আমরা প্রতিষ্ঠানের সকলেই গর্বিত যে, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাহিরে গিয়েও ভালো কিছু করছে।