চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃএসএম রুবেল:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জোরপূর্বক জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। আদালতে মামলা চলামান থাকার পরেও স্থাপনা নির্মাণের ভিডিও ধারন করতে গেলে মোবাইল কেড়ে মারধর করা হয়েছে জমির মালিককে। দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে জমি ভোগদখলে রাখলেও সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান লোকজন নিয়ে হামলা চালায় জমির উত্তরাধিকারীর উপর।
হামলায় গুরুতর আহত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয় সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বালুগ্রামের মৃত মাহবুবুর রহমানের ছেলে জসিম উদ্দিনের। ঘর নির্মাণের ভিডিও ধারন করতে গেলে যুবলীগ নেতার নির্দেশে জসিমকে বেধড়ক মারধর করে তার ২০-২৫ জন লোকজন। মারধরের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, চারদিক থেকে ঘিরে কিল-ঘুষি মারা হচ্ছে জসিমকে।
জানা যায়, হামলায় আহত জসিম উদ্দিনের দাদা হেরাস উদ্দিন বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের তাহিরপুর মৌজার ১৮৫ ও ১৯১ দাগের ৮২ শতক জমি কিনে নেন। পরে ৯০ সালে এসব জমি ভাগবাটোয়ারা হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি ও অন্যান্যদের কাছ থেকে কিনে নেয়া জমিগুলো এতোদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছেন জসিম উদ্দিনের বাবা ও তার পরিবার। কিন্তু হঠাৎ করে জমিগুলো নিজেদের দাবি করে প্রভাব খাটিয়ে মামলা চলমান অবস্থায় খারিজ করে একই ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের আনসার আলীর মেয়ে উম্মে কুলসুম।
কিছুদিন আগে হঠাৎ করে ১৮৫ ও ১৯১ দাগের ৪৩ শতক জমির মালিকানা দাবি করেন, যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান। পরে গত রবিবার (২৩ জানুয়ারী) লোকজন নিয়ে আম বাগানের মধ্যে ঘর নির্মাণ করে এবং নিজেকে জমির মালিক ঘোষণা করে সাইনবোর্ড দেয়। বাড়ি নির্মাণের ভিডিও ধারন করতে গেলে মোবাইল কেড়ে ব্যাপক মারধর করে তারা। মারধরের কথা স্বীকার করেন যুবলীগ নেতা।
উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হামলার শিকার মৃত মাহবুবুর রহমানের ছেলে জসিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে আমরা জমিগুলো ভোগদখল করছি। এমনকি নিয়মিত খারিজও হচ্ছে আমাদের নামে। এখন হটাৎ জমিগুলো নিজেদের দাবি করছে মৃত আনসারের মেয়ে উম্মে কুলসুম ও তার পরিবার। পরে মামলা চলমান অবস্থায় জমিগুলো নিজেদের নামে খারিজ করেছে। মামলা চলমান অবস্থায় খারিজ হওয়ার কোন নিয়ম না থাকলেও তা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খারিজের অন্যতম প্রধান শর্ত জমি ভোগদখলে থাকা। অথচ আমাদের ভোগদখলে থাকার পরেও তাদের নামে খারিজ দিয়েছে ভূমি অফিস। বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তারা এই খারিজ করেছে। পরে মাস্তানদের কাছে জমি বিক্রি করে জোরপূর্বক দখল করছে। আইন অমান্য করে সমাধান না হলেও জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ করছে তারা।
জসিম উদ্দিনের মা জানায়, আমরাই দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের জমি ভোগদখল করছি। নিয়মিত রাজস্ব প্রদান করছি। হঠাৎ করে বাড়ি করতে গেলে আমার ছেলে ভিডিও নিতে যায়। এই অপরাধে মোবাইল কেড়ে বেধড়ক মারধর করেছে তারা। যা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। দেশে কি আইন আদালত নেই? আমরা অসহায় মানুষ তাই বিচার পাব না?
এবিষয়ে জমির মালিক দাবিদার উম্মে কুলসুমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে, যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান মারধরের কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, ভিডিও করছিল, তাই এনিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। আমি উম্মে কুলসুমের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়েছি, তাই স্থাপনা নির্মাণ করেছি। তার কিছু করার থাকলে আদালতে করতে পারে।
মাসুদুর মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করলেও ভিডিও সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন মিলে জসিম উদ্দিনকে মারধর করছে। অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান ও তার লোকজন ঝামেলা রয়েছে এমন জমি কিনে দখল করার কাজ করে। কম টাকায় ঝামেলাপূর্ণ জমি কিনে বিপুল পরিমাণ টাকায় প্লট আকারে এসব জমি বিক্রি করে যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান।
এবিষয়ে বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মারধরের বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান হামলার শিকার জসিম উদ্দিন।