

আরিফ প্রধান, গাজীপুর :
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী শেখের স্ত্রী আছিয়া খাতুন (৯০) এর মালিকানা সম্পত্তি তারই গর্ভজাত সন্তান মজিবুর রহমান আত্বসাৎ করতে জালজারিয়াতি মাধ্যমে দলিল সৃজন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে জানা যায, শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড বৈরাগীর চালা গ্রামের জোহর আলী শেখ ৪৩ নং শ্রীপুর মৌজার এসএ ৫৭, ১৫৭, ৮২০, ৮৫৯ আর এস ৬১৭, ৬১৮, ৬১৯, ৬২০, ৬২১ ও ৬২২ নং খতিয়ানে ১২ একর ৫০ শতাংশ সম্পত্তির রেকর্ডীয় মালিক। জোহর আলী শেখ ২ ছেলে মোঃ ইদ্রিস আলী, মোঃ ইউনুস ও ১ মেয়ে হুরেছা বেগমে ওয়ারিশ রেখে যান।
ইদ্রিস আলী শেখ পৈত্রিক সূত্রে সম্পত্তির মালিক ছাড়া এসএ ৫৩ আর এস ৪১৩ খতিয়ানে ৩ একর ২৭ শতাংশের একক মালিক। ইদ্রিস আলী শেখ জীবিত থাকাকালীন তার স্ত্রী আছিয়া খাতুনের নিকট হতে ১৫/০৩/১৯৭৯ ইং তারিখে ২২৬৩ নং এবং ২৮/০৮/২০০৯ ইং তারিখে ৯৪৬৩ নং পৃথক দুটি হেবার ঘোষনাপত্র দলিলমুলে ১ একর ৪০ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে ভোগদখল করে আসছেন।
অপরদিকে ইদ্রিস আলী শেখ তার রেকর্ডীয় সম্পত্তি হতে ১৬/০৩/২০০৫ ইং তারিখে ২২৬৩ নং এবং ১৮/০৮/২০০৯ ইং তারিখ ৯৪৬৩ নং হেবার ঘোষনাপত্র পৃথক দুইটি দলিলে ৩৫ শতাংশ করে মোট ৭০ শতাংশ এবং ২৫/০২/২০১৬ ইং তারিখে ২৯৭৭ নং অপর একটি হেবা ঘোষনাপত্র দলিলে ৪৮ শতাংশসহ মোট ১ একর ১৮ শতাং সম্পত্তি তার কন্য মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের নিকট
ভিন্ন ভিন্ন সাব – কাবলা দলিলের মাধ্যমে স্হানীয় নুরুদ্দিনের নিকট ২০ শতাংশ এবং পাওয়ার কম্পানীর মালিক মামুনের নিকট প্রায় ৫০ শংতাশ সম্পত্তি বিক্রি করেন।
মোছাঃ আছিয়া খাতুন দলিল মুলে ১একর ৪০ শতাংশ এবং ২০/০১/১৯৬৯ ইং তারিখে ৭৪৪ নং দলিলে এস এ ৫৭ আর এস ৬২২ নং খতিয়ান এস এ ১৮৯৩ আর এস ৯২৫২ নং দাগে স্হানীয় মোঃ হাবিবুর রহমানের নিকট হতে ২১ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয়সূত্র সহ মোট ১ একর ৬১ শতাংশ সম্পত্তির মালিক।
উক্ত মোছাঃ আছিয়া খাতুন ৩১/০৩/২০২১ ইং তারিখে ৪৯৫১ নং হেবার ঘোষনাপত্র দলিলের মাধ্যমে তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি হতে একই দলিলে তার কন্যাদ্বয় যথাক্রমে মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের নিকট ৪৯ শতাংশ এবং মোছাঃ নুরেছা বেগমের নিকট ০৭ শতাংশসহ মোট ৫৬ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রি করেন।
তাছাড়া মোছাঃ আছিয়া খাতুন তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি হতে ২৫/০২/২০১৬ ইং তারিখে ২৯৭৬ নং হেবার ঘোষনাপত্র দলিলের মাধ্যমে তার নাতীন মোঃ হুমায়ন কবিরের নিকট ৩৫ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রি করেন।
মোছাঃ তাছলিমা খাতুন, ম্বামী- আবুল হোসেননের আলাদা আলাদা দলিলের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বৈধ সম্পত্তি ১ একর ৬৭ শতাংশ।
সরেজমিনে স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,মৃত ইদ্রিস আলী শেখের ১০ সন্তানের মধ্যে মোঃ মজিবুর রহমান ৫ম, মজিবুর রহমানের তেমন শিক্ষা না থাকলেও যুবক বয়সে এলাকার মাতাব্বরদের সাথে ছিল সখ্যতা। তাদের ভালো গুনাবলী রপ্ত করতে না পারলেও মজিবুর কুটকৌসল এবং অসৎ গুনগুলী ধরে রেখেছেন।
মজিবুর ছিলেন ভাই বোনদের সবচাইতে দুষ্ট প্রকৃতির। মজিবুরের অত্যাচারে পিতা- মাতা অতিষ্ট থাকতেন। ইদ্রিস আলী শেখ ১০ টি সন্তান নিয়ে অভাব অনটনে দিন পার করছিলেন তখনকার সময় পরিবারের আয় রোজগার একমাত্র ইদ্রিস আলী করতেন। এদিকে সন্তানের সীমাহীন অত্যাচারে পরিবারটি দিশহারা। পরিবার ভাই বোনদের কথা চিন্তা করে ইদ্রিস আলী শেখের ছোট মেয়ে মোছাঃ তাছলিমা খাতুন ১৯৯৯ ইং সনে দুবাই চলে যান। তাছলিমার কঠোর পরিশ্রমে ইদ্রিস আলীর পরিবারে সুখ আর স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করে।
তাছলিমা মা- বাবার ভরন পোষনসহ যাবতীয় দেখবাল করেন। ইদ্রিস আলী শেখের নগদ টাকার প্রয়োজনে অন্যত্র সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে চাইলে তাছলিমা সম্পত্তি বিক্রি করতে বারন করেন। পরবর্তিতে ইদ্রিস আলী শেখ এবং আছিয়া খাতুন তাদের রেকর্ডীয় ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি হতে পর্যায়ক্রমে একাধিক দলিলের মাধ্যমে তাছলিমার বরাবরে ১ একর ৬৭ শতাংশ সম্পতি মেয়ে নুরেছা এবং নাতী হুমায়ন কবিরকে আলাদা দলিলে আছিয়া খাতুন এককভাবে আরো ৪২ শতাংশ সম্পত্তি লিখে দেন।
উক্ত মজিবুর মা- বাবার নামে থাকা মালিকানাধীন বিক্রিত সম্পত্তি দলিলমুলে ক্রয়কৃত সম্পত্তির মালিকদের হয়রানী করতে এবং সম্পত্তি দখলের চেষ্ঠায় নানান ভূয়া ও জালজালিয়াতি করে দীর্ঘদিন তাছলিমা- আবুল দম্পতিকে হয়রানি করে আসছে।
মজিবুর বিগত ২০/০২/২০১৭ ইং তারিখে পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে তাছলিমার বিরুদ্ধে ৯ ভাই বোনের ও মার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সম্পত্তি আৎসাত করতে মিথ্যা মোকদ্দমা বিঙ্গ যুগ্ন জেলা জজ আদালতে গাজীপুরে দেঃ মোঃ নং ৪৭/২০১৭ দায়ের করেন। উক্ত মামলার জবাবে ৯ ভাই বোন ও মা আদালতে স্বশরিরে উপস্হিত হয়ে স্বাক্ষর জাল করে মিথ্যা মামলা দাযের করা হয়েছে মর্মে আদালতে নিজ নিজ নাম ও স্বাক্ষ জমা দিলে ওই মামলাটি খারিজ করে দেন।
ব্যর্থ হয়ে মজিবুর জোর করে সম্পত্তি দখলের নতুন এক ফন্দি করে ক্রয়সূত্রে অপর মালিক আপন ভাতিজা মোঃ হুমায়ন কবিরের সম্পত্তি রাতের আধারে ছাপড়া তুলে বেআইনি ভাবে দখলের চেষ্টা করলে হুমায়ন কবির আইনি এবং সামাজিক সমাধা পেতে ১৩/১১/ ২০২০ ইং তারিখে গ্রাম্য সালিস ডাকেন।
উক্ত সালিসে মজিবুর রহমান ০৪/০১/১৯৭১ ইং তারিখে মানিকগন্জের হরিরামপুর সাব -রেজিস্ট্র অফিসে রেজিষ্ট্রকৃত পৃথক ২ টি দলিল যার নং ১২৬ ও ১২৭ মুলে সম্পত্তির মালিক বলে দাবি করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের সময় হরিরামপুর সাব- রেজিষ্ট্রি অফিসটি পাক বাহিনী আগুনে জালিয়ে দিলে ওই সময়কার সকল কাগজপত্র পুড়ে গিয়েছি।
মজিবুর জানান এ দুটি দলিলে ইদ্রিস আলী শেখের এসএ ৫৩ আর এস ৪১৩ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় সম্পুর্ন সম্পত্তি তাকে লিখে দিয়ে গেছেন বলেও দাবি করেন। উপস্হিত সকলেই দলিলটি সৃজন করা হয়েছে বলে তাকে সতর্ক করেন এবং সৃজিত দলিল দিয়ে ঝামেলা না করতে বারন করেন।মজিবুর সালিসের কথা উপেক্ষা করে একেরপর এক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নিরীহ তাছলিমা- আবুল দম্পত্তি সহ অন্যান্য বৈধ মালিকদেরকে আর্থীক ক্ষতিগ্রস্হ করে আসছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হযরানী এবং জান মালের ক্ষতিগ্রস্হ করবে বলে হুমকি অব্যাহত রেখেছে বলে জানা যায়।
তাছলিমা খাতুন জানান,জীবনের মায়া ত্যাগ করে নিজের ভবিষতের কথা না ভেবে মা- বাবর কথা চিন্তা করে তাদের শেষ বয়সে একটু সুখের জন্য এবং সংসারের অভাব অনটন সহ্য করতে না পেরে আমি ১৯৯৯ সালে দুবাই চরে যাই এবং ২০১২ সালে দেশে ফিরে আসি। ২০০৫ সালে আমি বিয়ে করি। আমার সংসারে স্বামী ১ মেয়ে ১ ছেলে ও ৯০ বছরের বৃদ্ধা মা রয়েছে। তিনি বলেন সম্পত্তিই আমার জন্য কাল। মা- বাবা তার সন্তানের হক আদায়েই হয়তো আমার নামে সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। এছাড়া মা তার অন্য মেয়ে এবং নাতীকেও সম্পত্তি লিখে দিযেছেন।
মজিবুর আমার ভাই সে বার বার আমাকে সম্পত্তি চাষাবাদ এবং অন্যান্য অবকাঠামে উন্নয়নে বাধা দিয়ে আসছে। মিধ্যা বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে আমাকে আর্থীকভাবে অনেক ক্ষতি করে আসছে সে আমার সহজ সরল স্বামী প্রাননাশের হুমকি দিয়ে আসছে। আমি ন্যায় বিচারের আশায় আইন আদালত ও গন্যমান্যদের দ্বরস্হ হয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছিনা। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মিথ্যা মামলা দিয়ে হযরানী করার ভযে আমি বৃদ্ধা মা, স্বামীসন্তান নিয়ে আতংকে দিন পার করছি।