সুমাইয়া শিলা,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিন চেয়ে আবারও হাইকোর্টে আবেদন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বুধবার (১৭ এপ্রিল) তার আইনজীবী শাহিনুজ্জামান শাহীন সাংবাদিকদের জানান,আগামী রবিবার (২১ এপ্রিল) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দাখিল করা হবে।
এর আগে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের বেঞ্চ গত বছর ১১ জানুয়ারি মিন্নির জামিনের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। পরে তিনি একই বছরের ৮ মে পুনরায় আবেদন করেন।এ আবেদনটি গত বছর ৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ আমিনুল ইসলামের বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ৪৯৭ নম্বরে থাকলেও এ আবেদনেরও শুনানি হয়নি। ফলে আবাও নতুন করে আবেদনের প্রস্তুতি নেওয়া হলো।
আলোচিত এ মামলায় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আছাদুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১০ আসামির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। বাকি চারজনকে খালাস দেওয়া হয়।
পরে নিয়ম অনুসারে একই বছরের ৪ অক্টোবর ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ অন্য আসামিরা আপিল করেন।
২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার সময়ে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সাথে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।
এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা। পরে ওই বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একই বছর ২৯ আগস্ট মিন্নিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। পরে সাক্ষ্য গ্রহণ,যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মিন্নি ছাড়া অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী,আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন,মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত,রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও মোঃ হাসান। খালাস পান মোঃ মুসা (পলাতক), রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।