পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:-
বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। আমরা জানি ব্যাংকের নগদ টাকার স্থিতিকে ‘তারল্য’ বলা হয়ে থাকে। যদি কোন কারণে ব্যাংকে নগদ টাকার সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যায় তখন ঐ ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হয়।
সরকার পতনের পর দেশের ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গ্রাহকরা তাদের চাহিদা পরিমাণ টাকা তুলতে পারছেন না এবং অনেকের জরুরি প্রয়োজনে বেশি টাকার চাহিদা থাকা সত্বেও পর্যাপ্ত টাকা তুলতে পারছেন না। এর কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, চিকিৎসা সেবা, মানুষের বিদেশ গমন ইত্যাদি বিষয়ের উপর ব্যাপক হারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যদিও বা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা উত্তোলনে একটি নির্দিষ্ট অংকের পরিমাণ বেধে দিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকে দেখা যাচ্ছে দশ হাজার বা পনের হাজারের বেশি টাকা গ্রাহকদেরকে দিতে পারছেন না।
তাছাড়া তারল্য সংকট ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক নগদ প্রবাহে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। উল্লেখ্য যে, গত দুই বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলো টাকার বিনিময়ে আন্তঃব্যাংক প্লাটফর্ম ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে। গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে সমপরিমাণ টাকার বিপরীতে ব্যাংকগুলোতে ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছিল।
মূলত বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সংকট, আমানতের ধীর গতি, কিছু শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের প্রতি আস্থার অভাব, রেকর্ড খেলাপি ঋণ ও ঋণ আদায়ে ধীরগতি ইত্যাদি তারল্য সংকটের প্রধান কারণ।
বর্তমানে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা উত্তোলন করতে না পারায় ঐ টাকা গ্রাহকদের বিশেষ কোন কাজে আসছে না বলে অনেকেই মনে করছেন। তাছাড়া একজন গ্রাহককে এক লক্ষ বা তার অধিক পরিমাণ টাকার জন্য দিনের পর দিন দশ-বিশ হাজার করে এক বা একাধিক চেকের মাধ্যমে টাকা তুলতে হচ্ছে। একারণে ব্যাংকার এবং গ্রাহকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত ব্যাংকের প্রতি আস্তা হারাচ্ছেন। অনেকেই ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছেন না। এমনকি গুরুতর অসুস্থ রুগীকে হাসপাতালে ক্যাশ টাকার প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ফলে সাধারণ গ্রাহকরা টাকা জমা করা থেকে বিরত রয়েছেন। যার ফলে ব্যাংকের তারল্য সংকট আরো তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর ফলেও দেশের রিজার্ভে বিস্তর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এভাবে আর কয়েকদিন চললে ব্যাংকসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মানুষের জীবন মান উন্নয়নের ব্যাপক ক্ষতি হবে। দেশের সাধারণ মানুষ চাই এই পরিস্থিতির একটি যৌক্তিক সমাধান। যে সমাধানে মানুষের চাহিদার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো স্বাভাবিক হয়ে ফিরে আসবে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং সংস্কার হবে। প্রবাসীরা নির্বিঘ্নে টাকা পাঠিয়ে দেশের রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে ব্যাংকের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে এবং গ্রাহকের আমানত চাহিবামাত্র ব্যাংক দিতে বাধ্য থাকবে। এজন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত সম্মানিত গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কৌশলগত সিদ্ধান্তই একটি যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।