পটিয়া ( চট্টগ্রাম) থেকে সেলিম চৌধুরী:-
সৈকতে ‘‘সাংবাদিক পরিবারের’’ মিলন মেলা।
সমুদ্র সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার। সৈকতের চিকচিক জলরাশি যেন বলে, এসো আমার বুকে এসো। সাগরের ঢেউয়ের তালে মিতালি সৃষ্টি করে ভ্রমন পিয়াসিরা। প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমনে যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। বর্তমানে কক্সবাজার রেলপথ চালু হওয়ার পর পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। ট্রেন ভ্রমন সহজ হওয়ায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে কক্সবাজার যাচ্ছে পর্যটকেরা। বন্ধের দিন হলে লাখ পেরিয়ে যায় পর্যটকে। রেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’ দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন সহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু রেখেছে। এ তিনটি ট্রেন দিয়ে হাজার হাজার পর্যটক সমুদ্র সৈকতে যাতায়াত করছে। পটিয়া পটিয়া প্রেসক্লাবের ৪ যুগ পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিক পরিবারের মিলন মেলার আয়োজন করেন প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। এ মিলন মেলার কর্মসূচির মধ্যে ছিল আনন্দ ভ্রমন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণ। কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমনের প্রস্তাব উঠলে প্রেসক্লাব সদস্যদের স্ত্রী-ছেলেমেয়েরা বায়না ধরে ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাবে। ২০ ও ২১ অক্টোবর দুই দিন ভ্রমনের তারিখ ধার্য হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেনে আপডাউন একটি বগি বুকিং করা হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চাল সি আর বি চট্টগ্রাম এর পরিবহন কর্মকর্তা একটি বগি ব্যবস্থা করে দেন। ২০ অক্টোবর রবিবার সকাল সাতটায় প্রেসক্লাব সদস্যসহ স্ত্রী-ছেলে মেয়ে মিলে ৭০ জন সদস্য পটিয়া রেল স্টেশনে এসে জড়ো হয়। নান্দনিক ডিজাইনের টি-শার্ট পরিহিত সদস্যরা এক লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আমির ভান্ডারের আওলাদ এস এম একে জাহাঙ্গীর ভ্রমন ও যাত্রা শুভ হওয়ার জন্য সবাইকে নিয়ে মোনাজাত পরিচালনা করেন। আহবায়ক আবদুর রাজ্জাক সঠিক দিকনির্দেশনায় সকাল সাড়ে সাতটায় স্টেশনে ট্রেন এসে হাজির হয়। রির্জাভ বগিতে সবাই ট্রেনে উঠে আসনে বসে যায়। দুপুর পৌনে ১১টায় কক্সবাজার আইকনিক রেল ষ্টেশনে গিয়ে ট্রেন থামে। টম টম ও সিএনজি টেক্সী যোগে ওশান পয়েন্টের ‘‘সমুদ্র বাড়ী’’ হোটেলে গিয়ে উপস্থিত হয় সকল সদস্য। আগেভাগে বুকিং করা রুমে হোটেল মালিক আলমগীর যার যার নির্ধারিত রুমে পৌঁছে দেয়। বেলা ২টায় দুপুরের খাবার দেয়া হয়। বিকালে সবাই চলে যায় সমুদ্র সৈকতে। কেউ সমুদ্রের আঁছড়ে পড়া ঢেউয়ের পানিতে স্নান করে, কেউবা গ্রুফ ।
বেঁধে সেলফি তোলে, কেউ ঘোড়ায় ও বাইকে চড়ে আনন্দ করার পর বিকেলে পশ্চিমের লাল সূর্য উঁকি মেরে সাগরের বক্ষে হারিয়ে যায়। সৈকতে ঘুরে ফিরে নাস্তা-সারার পর সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমে সংগীত শিল্পী এ্যানি বড়ুয়া, ‘‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’’ এই গানের তালে তালে নৃত্যে মেতে উঠে প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সদস্য সাংবাদিক নূর হোসেন, কালো রঙের এক বিশেষ পোষাকে তাকে মানিয়েছে ভালো। তার সাথে নৃত্যে যোগ দেয় সাংবাদিক রবিউল আলম ছোটন, আহমদ উল্লাহ ও শাহাজাহান চৌধুরী। এ্যানি বড়ুয়া ৩টি গান পরিবেশেনের পর মঞ্চে উঠেন শিল্পী জুলি। ‘‘দমাদম মাসকাকালেন্দর, আলিকা পাহেলেন্দর’’ এই গানের সুরের মূর্চনায় পুনরায় নৃত্যে সাড়া দেয় নূর হোসেন। এতে থেমে থাকতে পারেনি সাংবাদিক রবিউল, আহমদ উল্লাহ, তাপস, শাহ্্জাহান, আবদুর রাজ্জাক, সুজিত দত্ত, শফিউল আজম, মফিজুর রহমান। তাদের সাথে টেনে হেঁছড়ে সঙ্গী করা হয় প্রেস ক্লাব সভাপতি জাহাঙ্গীর ভাই ও সাধারণ সম্পাদক রানা ভাইকে। তারাও শরীর নেড়ে নৃত্যের কসরত দেখান। জুলির গানের পর শুরু হয় খ্যাতনামা ‘‘যাদুকর’’ কামাল আহমেদের যাদু প্রদর্শনী। চোখ ধাঁধানো অসাধারণ যাদু দেখিয়ে সাংবাদিক পরিবারের মহিলা সদস্যসহ উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলেন তিনি। যাদুর ফাঁকে কৌতুক পরিবেশন করেন ভ্রমন আয়োজন কমিটির সদস্য সাংবাদিক নূর হোসেন। অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য ক্যামরা বন্দী ও ভিডিও করেন পটিয়ার দর্পন এর আলভী। রাত ১১টায় ডিনার শেষে শুরু হয় আলোচনা সভা। এতে বিশেষ আকর্ষণ ও প্রধান অতিথি ছিলেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বিশিষ্ট সাংবাদিক পটিয়ার সন্তান আসিফ সিরাজ। বক্তব্য রাখেন পটিয়া প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস. এম. এ. কে. জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম রানা, যুগ্ম সম্পাদক সেলিম চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত
অর্থ সম্পাদক আহমদ উল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক রবিউল আলম ছোটন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিউল আজম, এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সদস্য নূর হোসেন, আবেদুজ্জামান আমিরী, কামরুর ইসলাম, ফারুকুর রহমান বিঞ্জু, সাধারণ সদস্য এস. এম. রহমান, সুজিত দত্ত, শাহ্জাহান চৌধুরী, ওবাইদুল হক পিপলু, সহযোগী সদস্য তাপস দে আকাশ, কাউছার আলম, এস. এম. জুয়েল, আবদুল্লাহ আল নোমান। আলোচনা সভা শেষে কেক কেটে ও পুরষ্কার বিতরণ করে অনুষ্ঠানের প্রথম দিবসের সমাপ্তি ঘটে। ২য় দিন সকালে নাস্তা শেষে সমুদ্র পাড়ে বিভিন্ন খেলাধুলার পর দুপুরে পারিবারিক মিলন মেলার অনুষ্ঠানে যোগ দেন দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাছির উদ্দীন হায়দার। দৈনিক আজকের পত্রিকার কক্সবাজার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ সাহেদ। মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও বাংলা নিউজ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি সুনীল বড়–য়া। অনুষ্ঠান মালা শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজার আইকনিক রেলষ্টেশনে ট্রেনের রিজার্ভ বগিতে উঠে প্রেস ক্লাব সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। সন্ধ্যা ৭টায় ট্রেন ছেড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ট্রেন চলাকালীন যাদুকর কামাল আহমেদ যাদু দেখিয়ে ও সাংবাদিক নূর হোসেন গান পরিবেশন করে সকলকে আনন্দ দেন। এতে একসময় ট্রেন এসে পৌঁছে পটিয়া রেল ষ্টেশনে। সবাই ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে যার যার গন্তব্য স্থানে ফিরে যায়। এভাবে ২ দিনের সাংবাদিক পরিবারের মিলন মেলার সমাপ্তি ঘটে। আনন্দ ভ্রমন আয়োজন কমিটিতে আহবায়ক ছিলেন প্রথম আলো প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক, সদস্য সচিব ছিলেন আজাদী প্রতিনিধি শফিউল আজম, যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন দৈনিক জনতা ও দৈনিক ইনফো বাংলা’র প্রতিনিধি সেলিম চৌধুরী,পূর্বকোণ প্রতিনিধি রবিউল আলম ছোটন, সমকাল প্রতিনিধি আহমদ উল্লাহ, সদস্য ইনকিলাব প্রতিনিধি নূর হোসেন আমাদের সময় প্রতিনিধি সুজিত দত্ত। কক্সবাজার আনন্দ ভ্রমণ আয়োজন কমিটির আহবায়ক দৈনিক প্রথম আলো প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক জানান, পটিয়া প্রেসক্লাব
চারযুগ পুর্তি উপলক্ষে আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা করা হয় এতে সকল সাংবাদিক পরিবারের সদস্যরা একসাথে আনন্দ করি।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত মানেই তো একসাথে আনন্দ বেদনার অনেক স্মৃতি হয়ে থাকবে আমাদের সকলের মাঝে।
পটিয়া প্রেসক্লাবের চারয়ুগ পুর্তি আনন্দ ভ্রমণ সহ নানান অনুষ্ঠান মালা সম্পুর্ন হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পটিয়া প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম রানা।