পরিতোষ কুমার বৈদ্যশ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:
সিসিডিবি একটি উন্নয়নমুলক বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটি মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। সিসিডিবি-এনগেজ প্রকল্প নারীদের এবং
স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইংরেজি তারিখে সিসিডিবি এনগেজ প্রকল্প অফিসে দায়িত্ব বহনকারী ব্যক্তিদের সাথে সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর। সভাপতিত্ব করেন পিসিআরসি প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী সুজন বিশ্বাস। আরও উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আহসান হাবীব, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এর ফিল সুপারভাইজার শিখা মন্ডল, সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী এস এম আরিফুজ্জামান ও ফিল্ড সুপারভাইজার পথিক কুমার মন্ডল, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর প্রশিক্ষক মোঃ মাহমুদুল হাসান, সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আহসান হাবীব, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরিদাস হালদার,প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য নিপা চক্রবর্তী, ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রেহানা পারভীন, ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাজল কান্তি সরকার, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং সিসিডিবি এনগেজ প্রকল্পের নারী উন্নয়ন দলের সদস্যবৃন্দ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সিসিডিবি পি সি আর সি বি প্রকল্পের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর সুজন বিশ্বাস এবং এনগেজ প্রকল্পের সকল কর্মীবৃন্দ প্রমূখ।
শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে এনগেজ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার নিলীমা রানী কর্মশালা শুরু করেন। পরিচয় পর্ব শেষে নিলীমা রানী সিসিডিবি সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট এর মাধ্যমে সিসিডিবির মূল্যবোধ, এনগেজ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত ধারনা দেন।
এনগেজ প্রকল্পের কার্যক্রম ও ফলাফল ছবির মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।
পরবর্তী সেশনে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, নারী পুরুষ উভয়েই ইনকাম করবে। কারন নারীরা কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। তারা চাইলে সবকিছু করতে পারবে।আমাদের দেশের নারীরা এভারেস্ট এর চুড়ায় উঠে গেছে। যাদের বয়স ১৮-৩৫ তারা যুবক। তারা সবাই সমান। যুব উন্নয়ন এর প্রশিক্ষণে নারী পুরুষ উভয়ে অংশগ্রহণ করবে। সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে নারীদেরকে পুরুষ এর পাশাপাশি সব কাজ করতে হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর এর ফিল সুপারভাইজার পথিক কুমার মন্ডল তার সেশনে ভিন্ন ভাতা যেমন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা পাওয়ার জন্য বয়স সর্বনিম্ন ১৮ হতে হবে। শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী বলা হয়েছে ১৮ বছর নিচে সকল মানব সন্তানই শিশু। সমাজসেবা অধিদপ্তর ৫৪ ধরনের সেবা বাংলাদেশে দিয়ে থাকে। আমাদের লবণাক্ত এলাকায় ক্যান্সার অনেক বেশি হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন করলে ক্যান্সার সহ আরো ৫ টি রোগের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা এককালীন অনুদান দেওয়া হবে । ৩১২ জনকে বিগত অর্থ বছরে শ্যামনগর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে উক্ত সেবা দেওয়া হয়েছে।
তিনি একটি মোবাইল নাম্বার দেন এবং বলেন বাল্য বিবাহ সম্পর্কিত তথ্য দিলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে একশন নেওয়া হবে। যে নাম্বার থেকে ফোন দেয়া হবে তার তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে। প্রত্যেক হসপিটালে সমাজসেবার একটা করে অফিস রয়েছে। যারা অসহায় তাদের আবেদন করলে ফ্রি ঔষধ নেওয়ার সুবিধা আছে।
লোনের বিষয়ে তিনি বলেন, সমাজসেবা থেকে বিনা সুদে লোন দেওয়া হয়। একেকটা গ্রাম নিয়ে আমাদের একেকটা মাতৃকেন্দ্র রয়েছে। সেখান থেকে লোন দেওয়া হয়। এখান থেকে ৫০,০০০ টাকার লোন নেওয়া সম্ভব।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সেবা সমুহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ১০৯ নাম্বারে ফোন দিলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য আমরা প্রস্তুত।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষাকর্মী এস এম আরিফুজ্জামান শিশুদের সাথে ব্যবহার এবং নির্যাতন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। ছেলে-মেয়েদেরকে অধিকার সমান। তাদের অবহেলা করা যাবে না। বাচ্চাদের আপনার আদর করবেন কিন্তু সেটা যেন তাদের জন্য ক্ষতিকর না হয়।
ইউপি সদস্য নিপা চক্রবর্তী বলেন, মহিলা সদস্যগন তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে কাজ করে কিন্তু পুরুষ সদস্যদের সমান কার্ড পায়। এইটার সমাধান করা গেলে আমরা আরো ভালো করে কাজ করতে পারবো।
সর্বশেষে ইউপি সদস্য কাজল কান্তি সরকার বলেন, আমরা আজকে যে গঠনমূলক আলোচনা শুনেছি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে তা আমাদের কাজে লাগবে। আমরা অনেক ভাতা কার্ডের বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনেছি। আমরা জেনেছি সেখানে কোন টাকা পয়সা দিতে হয় না। আমাদেরকে জনগণ প্রতিনিধি বানিয়েছেন তাদের সেবা করার জন্য। আমি চেষ্টা করি তাদেরকে সময় দেওয়ার।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা ইউপি সদস্যরা বিভিন্ন মিটিং এ যেয়ে গুরুত্ব দেই না। কিন্তু আজকের এই প্রশিক্ষণটি অনেক শিক্ষনীয় ছিল যেটা আমাদের সবার জীবনে অনেক কাজে লাগবে। আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি এবং সচেতন হয়েছি। আমি সকল সরকারি কর্মকর্তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তারা আজ এসে আমাদেরকে সময় দিয়েছেন। পরবর্তীতে যদি এরকম কোন প্রোগ্রাম হয় আমরা অবশ্যই উপস্থিত হব।
নিপা চক্রবর্তী বলেন, সিসিডিবি এনগেজ প্রকল্পের নারীরা ধানখালীর একটি রাস্তার জন্য অ্যাডভোকেসি করেছিল। তারা ইউনিয়ন পরিষদের যেয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছিলো ও চিঠি প্রদান করেছিল। তারা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল এবং আমরা আশা করি ওই রাস্তাটা আমরা ঠিক করতে পারবো। আমরা এরকম একটা বাজেট মাথায় নিচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গর্ভবতীদের ভাতা কার্ড করার জন্য আমাদের কাছে আসলে আমরা সহায়তা করব।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক মাহামুদুল হাসান বলেন, যারা আজকে এই প্রশিক্ষণটিতে অংশগ্রহণ করেছেন তারা যেন এই শিক্ষাটা নিয়ে কাজে লাগায়। আজকের এই কথাগুলো এই রুম থেকে বের হয়ে ভুলে গেলে হবে না। যখন আপনাদের মধ্যে লিডারশিপ বৃদ্ধি পাবে এবং সচেতন হবেন তখন আপনারাই সবার সামনে এভাবে কথা বলবেন।
সিসিডিবি এনগেজ প্রকল্পের মেঘনা নারী উন্নয়ন দলের সদস্য বিথীকা মন্ডল বলেন, এনগেজ প্রকল্প কর্তৃক আয়োজিত এই কর্মশালা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমরা জানতে পেরেছি যে অজ্ঞাতবশত আমাদের ছেলে-মেয়েদের আমরা অনেক মারতাম আবার আদর করতাম। এখন জানতে পেরেছি সেগুলো করা যাবে না। এনগেজ প্রকল্প থেকে পরবর্তীতে এরকম কোন প্রশিক্ষণ এর আয়োজন করলে আমরা সেখান থেকে আরো তথ্য পেতে পারবো।
পিসিআরসিবি প্রকল্পের উপজেলা কো-অরডিনেটর সুজন বিশ্বাস সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবারে একজন দায়িত্ব বহনকারী ব্যক্তি রয়েছে। যে যে অবস্থায় থাকে সেটিকে পরিবর্তন করতে না পারা সেই ব্যক্তি হল ডিউটি বেয়ারার বা দায়িত্ব বহনকারী। এনগেজ প্রজেক্ট চমৎকার ভাবে সকল ডিপার্টমেন্ট থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কে নিয়ে এসেছেন আপনাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।