শেখ ফজলে রাব্বি , জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের মেলান্দহে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের শহীদ ১৮শ টাকা বেতনের নৈশপ্রহরী, গড়েছেন তুলেছেন অঢেল সম্পদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেলান্দহ পৌরসভার দক্ষিণ আদিপৈত গ্রামের মৃত কালু বেপারী ছেলে শহীদ। ১৯৯৪ সালে মেলান্দহ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে নৈশ্যপ্রহরী হিসাবে যোগদান করেন। তারপর ২০০০১ সালে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহীদ নৈশ্যপ্রহরী কাজ করে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে। প্রতিদিন রাতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস পাহাড়া দিতেন। ধীরে ধীরে তিনি সাব-রেজিস্ট্রারের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। যখন যে সাব-রেজিস্ট্রারই আসেন, তিনি তার ওপর আস্থা রাখেন। এরপর থেকে তিনি দলিল তদবির, দলিলের নকল দেয়া, জমিনের সন দেখে দেয়া, সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসারকে দেখা শুনা করা। তার বৈধ-অবৈধ কাজ সম্পাদনের জন্য সাব-রেজিস্ট্রার ও অন্য কর্মচারীকে ম্যানেজ করে একপর্যায়ে গড়ে তোলেন বিশাল ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। শহীদ অফিসের যাবতীয় কাজ করেন। শহীদের ইশারায় সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস চলে।সেই ক্ষমতার দাপটে নৈশ্যপ্রহরী শহীদ ঘুষের টাকায় কোটিপতি হয়েছেন।
সরেজমিনে পৌরসভার দক্ষিণ আদিপৈত এলাকায় অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, দক্ষিণ আদিপৈত রাস্তায় সাথে প্রায় ১০ শতাংশ জমির উপর আলিশান তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি প্রস্তুতি দেখে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন শহীদ। এদিকে একজন নৈশ্যপ্রহরী বেল্ডিং করাতে আদৈপত আশপাশের বাসিন্দারাও রীতিমতো অবাক। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, শহীদ এত টাকা কোথায় পেলেন? কীভাবে তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করেন। যেন এলাকার ছোটখাট একজন জমিদার।
অথচ ১৯৯৪ সালে চাকুরী পাওয়ার আগে তাদের ছিল ভাঙ্গা ছনের ঘর। তার পিতা হতদরিদ্র কালু মুন্সী বেপারী শহীদ সংসারের হাল ধরতে মাঝে মাঝে মাছ বিক্রি করতেন। তবে ছেলে শহীদ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চাকুরি পাওয়ার পর আলাদীনের চেরাগের মতোই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সাব-রেজিস্ট্রার স্টাপ বলেন, শহীদের মূল বেতন ১৮০০ টাকা মাত্র। এই টাকা দিয়ে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। পরিবার চালানো সম্ভব না। নিজের পকেট খরচ চলে না। আমি জানি শহীদের মোবাইল খরচ, চা, পান, সিগারেট সব মিলে মাসে খরচ প্রায় ৩০০০ টাকা। সেখানে কোটি টাকার বাড়ি প্রস্তুতি নেয়া অসম্ভব। এটা অসৎ পথ অবলম্বন না করলে মোটেও সম্ভব না।
স্থানীয়রা বলেন, শহীদের নুন আনতে পান্তা ফুরাত। শহীদ গরিব ঘরের সন্তান, তার আগে কিছুই ছিল না, চাকুরি হওয়ার পর ঘর বাড়ি, টাকা পয়সা, জমা জমি সব করেছে। তার বর্তমানে কোন কিছুই অভাব নেই।
এ বিষয়ে শহীদের ভাই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন ওমর আলী বলেন, জমি জামালপুর না ময়মনসিংহ কিনেছে ঢাকা কিনেছে।
এ ব্যাপারে নৈশ্যপ্রহরী শহীদ বলেন, অনেক দিন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে থাকি।আপনাদের কাজ করেই যা ইনকাম হয়েছে। তা দিয়েই সব কিছু করেছি।
এ ব্যাপারে সাব রেজিস্ট্রার পলাশ তালুকদার বলেন, শহীদ আমার অফিসের মাষ্টাররোলের নৈশপ্রহরী। অফিসের দাপ্তরিক কাজে সহায়তার জন্য দিনের বেলায় তাকে দিয়ে কাজ করানো হয়। তার বিষয়ে কোন জানার থাকলে তার সাথে কথা বলবেন।
এ বিষয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় জামালপুরের পরিচালক মলয় কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা কমিশনে পাঠাবো, কমিশন অনুমতি দিলে এ বিষয়ে অবশ্যই অনুসন্ধান করবো।