
সাইদুল ইসলাম রনি, কাপাসিয়া(গাজীপুর)প্রতিনিধি:
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে দূর্গাপুর ইউনিয়নের বাড়ীগাঁও ব্লকের মোঃ মনজুরুল আলম এর সার্বিক সহযোগিতায় ঘিঘাট গ্রামে ধানের ক্ষতিকর ও উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতি শনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এ বছর রোপা আমন ধানে আলোক ফাঁদ স্থাপনের এক কর্মসূচি হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় আলোক ফাঁদ স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্ব স্ব ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
কাপাসিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আলোক ফাঁদ ধানের পোকা দমনের একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। ধানের পোকামাকড় দমনে কৃষকের কাছে আলোক ফাঁদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পোকামাকড় দমনে মাত্রাহীন পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার জীববৈচিত্র্য,পরিবেশ,পশুপাখি ও মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে ৷ কীটনাশকের এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রোপা আমন ধান রক্ষা করতে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কৃষকরা আলোক ফাঁদের মতো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে৷ আমন ধানের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করছে। ফলে এক দিকে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অপর দিকে ক্ষতিকর কীটনাশক থেকে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে।
ঘিঘাট গ্রামের কৃষক বাচ্চু জানান ধানখেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে উপকারী ও ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি চিহ্নিত করে ক্ষতিকর পোকা দমন করা সহজ হয়েছে।
গ্রামের কৃষক দেলোয়ার জানান জানান, ধানের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে করণে জন্য গাছের ডাল পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা হয় এতে করে ক্ষতিকর পোকামাকড় পাখি খেয়ে ফেলে। সেই সাথে এতে ক্ষতিকর পোকা শনাক্তকরণে সন্ধ্যায় আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা বলেন কৃষিবিদ সৈয়দ শাকিল আহমেদ বলেন, ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিতে হয়। পাখি বাঁশের এই আগা, কঞ্চি, গাছের ডালে বসে ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায়। পোকা দমনের এই পদ্ধতির নাম পার্সিং। ক্ষতিকর পোকামাকড়, বিশেষ করে মাজরা পোকার মথ দমনে এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। ধানের চারা রোপণের ২০ দিনের মধ্যে খেতে পার্সিং করা হয়। এক বিঘা জমির একটি খেতে কমপক্ষে ১০টি বাঁশের আগা, কঞ্চি বা ডাল পুঁততে হয়। এ পদ্ধতিতে সন্ধ্যার পর ধানখেত হতে ৭০ থেকে ৮০ মিটার দূরে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিকোণাকার করে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হয়। এরপর মাটি থেকে আড়াই থেকে তিন ফুট ওপরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে খুঁটির তিন মাথার সংযোগস্থলে রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে দিতে হয়। এর নিচে একটি বড় আকারের প্লাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রাখা হয়। সন্ধ্যার পর মাঠ জুড়ে যখন অন্ধকার নেমে আসতে থাকে তখন আলোক ফাঁদের আলোর ঝলকে আকৃষ্ট হয়ে ধানখেতের বিভিন্ন পোকামাকড় এ পাত্রে চলে আসে। ধান ক্ষেতের পাশেই ডাল পেতে পাখিদের বসার ব্যবস্থা করা হয় ফলে ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় পাখি খেয়ে ফেলে। এভাবে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে ধান ফসলের মাঠে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয় করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অতি অল্প খরচে তৈরি আলোক ফাঁদ অন্ধকার রাতে দেখতে দৃষ্টিনন্দনও বটে। এতে খরচ কম হয় এবং পরিবেশবান্ধব।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুরাইয়া আক্তার এবং কৃষিবিদ অলি ভৌমিক, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিদা বানু সিকদার, রাইয়ান সরকার প্রমুখ ৷

Reporter Name 

















